জনগণের আকাঙ্ক্ষার গতি-প্রকৃতি
বর্তমানে এক অস্থির সময় পার করছি আমরা। দীর্ঘকাল ধরে একটি দলের নিরবচ্ছিন্ন অনিয়মতান্ত্রিক শাসন দেখে দেখে ভেতরে ভেতরে বীতশ্রদ্ধ হলেও জনগণ ভয়ে কিছু প্রকাশ করতে পারেনি। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের মাধ্যমে আকস্মিকভাবে সেই ভয় দূরীভূত হয়ে গেলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈপ্সিত ন্যায়ভিত্তিক, সাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলাপরায়ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ অনুভব করছে। কিন্তু সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে একের পর এক বাধা আসছে সামনে। নবপ্রতিষ্ঠিত সরকারকে ভেতর এবং বাইর, দুই দিকের বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই আন্দোলনের কাতারে শামিল জনতা মনের চাওয়া জোরেশোরে বলতে পারছে না। তবু তাদের চেপে রাখা কথা সহজে অনুমান করা যায়, বোঝা যায়, দেশের মানুষ এ মুহূর্তে ঠিক কী চায়।
জনগণের মনের একটা কথা রাতারাতি পূরণ হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে সে দাবি পূরণ করতে তখনকার সরকার বাধ্য হয়েছে। চাকরিতে পিতা-মাতা-দাদা-দাদি, নানা-নানির কীর্তির জন্য পুত্র-কন্যা-নাতি-নাতনি উত্তরাধিকারসূত্রে কোনো সুবিধা পাবে না-যার যার কোমরের জোরে তাকে চলতে হবে। সেই সঙ্গে সুবিধাভোগী একটি শ্রেণি তৈরি করে তাদের সহায়তায় সমাজের ভেতরে একটা কোটারি গোষ্ঠী সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের ঐক্য বিনষ্ট করা চলবে না। আন্দোলন আরেকটি বিষয় ফয়সালা করে দিয়েছে। সেটা হচ্ছে, জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর। জনগণ যদি চারদিক থেকে সমবেত হয়ে আসতে পারে, তাহলে শটগান, রাইফেল, জলকামান, সাঁজোয়া গাড়ি, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট, কারফিউ, ১৪৪ ধারা কোনো কিছুই সামনে দাঁড়াতে পারে না। জনগণ যেহেতু দেশের সবচেয়ে বড় ইউনিট, তাই জনগণ ন্যায়ের পক্ষে থাকলে সংখ্যার জোরে তারা বিজয়ী হয় এবং অন্যায় পিছপা হতে বাধ্য হয়।