সংসদে পেশাজীবীদের জন্যও একটি কক্ষ থাকা উচিত
দেশে গণতন্ত্রের সংকট ও উত্তরণ নিয়ে লেখালেখি, আন্দোলন-সংগ্রাম কম হয়নি। কিন্তু গণতন্ত্রের এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারপরও গণতন্ত্রের সংকটটা বুঝতে চেষ্টা করছি নিজের মতো করে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের একটি বাণী-‘অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়’। সুকান্তের কবিতায় আছে, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়/ পূর্র্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। আমাদের গণতন্ত্রের সংকটের সঙ্গে এ দুটি পরিস্থিতির একটি গভীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দারিদ্র্যের সঙ্গে গণতন্ত্রেরও ওইরূপ শত্রুতার সম্পর্ক। অনেকটা দুষ্টচক্রের মতো, গণতন্ত্র নেই বলে দারিদ্র্য কমানো যাচ্ছে না। আবার দারিদ্র্য আছে বলে গণতন্ত্রের উন্নতি হচ্ছে না। এ চক্রব্যুহ ভেদ করা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।
গণতন্ত্রকামী কিছু মানুষ যারপরনাই প্রাণান্ত চেষ্টা করছে নানা পদ্ধতি, সূত্র, তত্ত্ব আবিষ্কার করে গণতন্ত্রের সংকট উত্তরণের। কিন্তু ‘সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ নীতির পরিবর্তে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনরা ‘নিজের তরে নিজেরা আমরা/ সকলে তোমরা আমার তরে’ নীতি গ্রহণ করায় প্রকৃত গণতন্ত্রকামীদের ক্ষুদ্র প্রয়াস সর্বদাই পদদলিত হয়েছে। যা হোক, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের ফলে জাতির সামনে আরেকবার সুযোগ এসেছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে নতুনভাবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠার যাত্রা আরম্ভ করার। গণতন্ত্র একটি দীর্ঘ সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা। একশ দিনে বা এক হাজার দিনে আমরা এ অভীষ্ট অর্জন করতে পারব না। কিন্তু যাত্রাটি যাতে শুদ্ধ হয় সে চেষ্টা তো করতে হবে। যাত্রা যদি অশুদ্ধ হয়, তাহলে শত সহস্র বছরেও আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। ’৭২ থেকে গত ৫২ বছরে, নিদেনপক্ষে ’৯০-এর পর গত ৩৪ বছরে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সংসদ
- জাতীয় সংসদ