অভিনয় শিল্পীদের ব্যবধানের বৈচিত্র্য
ঢাকায় পড়াশোনা করতে এসে থিয়েটার করা শুরু করি। থিয়েটারে যাওয়া-আসার আলাদা একটা খরচ আছে। বাড়ি থেকে গুনে গুনে টাকা আসে। শুরু করলাম চাকরি। তারপর ১৯৯৯ সাল থেকে পড়াশোনা-থিয়েটারের পাশাপাশি চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি মিডিয়াকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করি।
২০০২ সালে পুনরায় পিপিআরসি (পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার) নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করে, এক/দুই বছর পর আবার অভিনয় পেশায় পুরোপুরি মনোযোগ দেই। ইদানীংকালে আবার চাকরি প্রয়োজনীয় মনে হয়, এ তো গেলো আমার গল্প, মিডিয়াতে এমন অভিনয়শিল্পী আছেন অসংখ্য।
অভিনয় এবং অন্য বা ব্যবসায় যুক্ত আছেন অনেক অভিনয়শিল্পী। যারা এভাবে দুই পেশায় যুক্ত আছেন, তারা একপ্রকার সচ্ছল জীবনযাপন করছেন। শুধুমাত্র অভিনয়কে উপজীব্য করে যাদের দিনাতিপাত করতে হয়, তাদের বৃহৎ অংশ অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা, দুশ্চিন্তা এবং নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটান। কারণ, কাজের সুষম বণ্টন ব্যবস্থা নেই।
বিটিভি যুগে টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্রের শিল্পীদের সূক্ষ্ম বিভাজন ছিল। নাটকের হাতেগোনা কয়েকজন অভিনয়শিল্পী সেই সময় চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন। তথাপি বাংলাদেশ টেলিভিশনে তাদের গ্রেড অনুযায়ী সম্মানী যা ছিল তাই গ্রহণ করতেন।
কিশোর বয়সে নিয়মিত বিটিভি দেখা দর্শক আমরাও নায়ক-নায়িকার বাইরেও চরিত্রাভিনেতাদেরও চিনতাম। প্রযোজক, পরিচালক এবং নাট্যকারদেরও নাম জানতাম। হ্যাঁ, তখন খুব বেশি অপশনও ছিল না আমাদের হাতে। কিন্তু বর্ডার এলাকার মানুষেরা বাঁশের এন্টেনা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তখনো ডিডি মেট্রো দেখলেও, বাংলাদেশের নাটকের সময় ভুলতো না। তারপর সবাইকে চমকে দিয়ে এলো ‘ডিশ লাইন’। একসাথে অনেক চ্যানেল! তবুও বাংলাদেশের নাটক দেখতে মিস নেই।
সেই সময়ে বেইলি রোড ছিল অন্যরকম আকর্ষণীয় স্থান। কেননা, ওখানে গেলে কোনো বা কোনো বিটিভির অভিনয়শিল্পীদের দেখা যেত। যেকোনো মঞ্চ নাটকের প্রদর্শনী দেখলেও এক বা অধিক অভিনয়শিল্পীর দেখা পাওয়া ছিল ঈদের চাঁদ দেখার মতো আনন্দ। বিষয়টা এমন যে, থিয়েটার থেকে অভিনয়শিল্পী নির্বাচন তখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় ছিল।
ঠিক তেমনিভাবে আমারও বিটিভির নাটকে পদার্পণ থিয়েটার থেকেই। থিয়েটার এবং মিডিয়ায় কাজের সূত্রে জানতাম তখনো অধিকাংশ অভিনয়শিল্পীদের অভিনয়ের পাশাপাশি দ্বিতীয় উপার্জনের মাধ্যম ছিল। শুধুমাত্র মিডিয়ায় কাজ করা অর্থ দিয়ে তখনো কেউ উচ্চবিত্তের জীবনযাপন করতে পারতেন না। তারপরও অভিনয়শিল্পীরা সম্মান ও আনন্দ নিয়ে অভিনয়ের কাজটি করতেন।
চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা'র পর ২০০০ সালে ইটিভি (একুশে টেলিভিশন) সম্প্রচার শুরু করার পর বাংলাদেশের মিডিয়ার মানুষেরা যেন নতুন প্রাণ পেলো। পরিচালনায় নতুনত্ব, গল্প নির্ভর সমসাময়িক কাহিনি, থিয়েটার, কণ্ঠ, শিক্ষক, মডেল, ফ্যাশন, গান, উপস্থাপনা, অনুষ্ঠান, সংবাদ এমনকি অভিজ্ঞতাবিহীন জনসাধারণকেও চরিত্রের প্রয়োজনে অভিনয়ে যুক্ত করা শুরু হলো।