
ভারতকে বুঝতে হবে বাংলাদেশের মানুষ কী চায়
অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে তিন মাসের মাথায় বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কটা কোন পর্যায়ে আছে?
এম হুমায়ুন কবীর: আমার মনে হয়, জটিলতা বাড়ছে। দুই দেশের সম্পর্ক তো বহুমাত্রিক ও বহুমুখী। বর্তমানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে অনেকটা একপক্ষীয়। আমরা বিদ্যুৎ আমদানি করছি, ডিজেল আমদানি করছি। ভারত থেকে চাল, পেঁয়াজ, আলুও আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে না। নিকট প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দুই দেশের সম্পর্ক রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক। আমাদের সাংস্কৃতিক বন্ধনটাও দীর্ঘদিনের। তৃতীয় অনেক দেশের ভিসার জন্য বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীকে দিল্লি যেতে হয়। গত ১৫ বছর ভারত সহজে ভিসা দিত। গত আগস্ট থেকে ভিসা খুব সীমিত করা হয়েছে। ভিসা সহজ করা ভারতের সদিচ্ছার প্রথম ধাপ হতে পারে।
তাহলে দুই দেশের টানাপোড়েনটা বাড়ল কেন?
এম হুমায়ুন কবীর: ৫ আগস্টের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা তারা মানতে পারেনি। এ জন্য নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আমি মনে করি, সমস্যা সমাধানে দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে পরিস্থিতিটা যেন কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। দুই দেশের মধ্যে যেসব সমস্যা আছে, কূটনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তার আলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জনপরিসরে উত্তেজনা তৈরি করা যাবে না।
সাম্প্রতিক কিছু কিছু ঘটনা তো পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তুলেছে। যেমন কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে বিজেপির সমর্থকেরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছেন।
এম হুমায়ুন কবীর: এটি উদ্বেগজনক ঘটনা। প্রথম কথা হলো যেকোনো দেশের মিশন ও তার কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব স্বাগতিক দেশের। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঘটনার প্রতিবাদ করার পাশাপাশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আমরা আশা করব, এ বিষয়ে ভারত যা যা করণীয়, সেটা করবে। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা কেউ কাউকে অগ্রাহ্য করতে পারি না। আমাদেরও যেমন ভারতের প্রয়োজন আছে, তেমনি ভারতেরও বাংলাদেশের প্রয়োজন আছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারতের সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার খবর ছাপা হয়েছে। এটা নিয়ে তো তাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ আছে।
এম হুমায়ুন কবীর: এটা কোনোভাবে বাঞ্ছনীয় নয়। সব পক্ষকে সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। কারও এমন কোনো কাজ করা ঠিক হবে না, যাতে সামাজিক অস্থিরতা ও অবিশ্বাস বাড়ে।
ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়াতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো কূটনৈতিক ঘাটতি আছে বলে মনে করেন?
এম হুমায়ুন কবীর: আমাদের দিক থেকে ঘাটতি আছে, বলব না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বার্তায় স্পষ্ট ভাষায় সমতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। বাংলাদেশের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে ভারতের সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে এসেছেন। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও প্রধান উপদেষ্টা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা ছিল সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একটি বৈঠক করার। কিন্তু সেটা হয়নি। যদিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এরপর আমরা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি দেখিনি। সেটা হওয়া উচিত ছিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক