শ্বেতহস্তী প্রকল্প হলেও ঋণ পরিশোধে কর্ণফুলী টানেলকে কাজে লাগাতে হবে
২০২৩ সালের অক্টোবরে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় কর্ণফুলী টানেলই নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল। আমি প্রকল্পটির একজন বড় সমর্থক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দীর্ঘমেয়াদে এ টানেলের সুদূরপ্রসারী ও বহুলবিস্তৃত ব্যবহার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য উপকার সাধন করবে। অবশ্য এটাও বলা প্রয়োজন, প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েক বছর টানেলটি একেবারে স্বল্প ব্যবহৃত থাকবে বিধায় টানেলটির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যানবাহনের টোল থেকে উঠে আসবে না।
গত এক বছরে রক্ষণাবেক্ষণ খরচের এক-চতুর্থাংশও যানবাহনের টোল থেকে উঠে না আসার ব্যাপারটি সম্প্রতি ফলাও করে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। সেজন্য সাধারণ জনগণের কাছে প্রকল্পটিকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল ‘সাদা হাতি প্রকল্প’ মনে হওয়াই স্বাভাবিক। বলা হচ্ছে, টানেল প্রকল্পটি সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের তথাকথিত ‘প্রেস্টিজ প্রকল্প’ কিংবা দুর্নীতির খাই মেটানোর জন্য গৃহীত ও বাস্তবায়িত আরেকটি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প। প্রকল্পটিতে দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেটা অন্তর্বর্তী সরকারের তদন্ত করা প্রয়োজন। তবে যেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় তা হলো, টানেলটি নির্মাণের জন্য মোট ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে। সে ঋণ পরিশোধের বার্ষিক কিস্তি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য বড়সড় বোঝা হিসেবে চেপে বসবে। যে সত্যটি সবারই মেনে নিতে হবে তা হলো প্রথম কয়েক বছর টানেলটি অত্যন্ত স্বল্প ব্যবহৃত (গ্রসলি আন্ডার ইউটিলাইজড) সড়কপথ থাকার কারণে এ টানেলের টোলের আয় থেকে ঋণের বার্ষিক কিস্তির অর্থ পরিশোধ করা তো দূরের কথা, টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ সরকারি বাজেট থেকে বেশ কয়েক কোটি টাকা প্রতি বছর ভর্তুকি দিতে হবে।