রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা
জনসংখ্যার অনুপাতে রাজনৈতিক দলের সংখ্যার দিক থেকে অন্য অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। বলা যেতে পারে, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক বেশি। এটা যে রাজনীতির প্রতি জনগণের দুর্নিবার আকর্ষণ ও জনগণের রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলনের কারণে ঘটে, তা নয়। বরং জনগণের সেবার পরিবর্তে এর মাধ্যমে নানা ধরনের ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যেই অনেকে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আবার একই উদ্দেশ্যে অনেকেই নিজেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নেয়। উভয় ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত লাভের দিকটি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। ধারণা করি, খুব কমসংখ্যক দলই আছে, প্রকৃতপক্ষে যারা জনগণের সেবা করার মনোভাব নিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। অনেকেই রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে নানাভাবে লুটপাট চালিয়ে থাকে।
কেউ কেউ বালুমহাল দখলের হাতিয়ার হিসাবে রাজনৈতিক দলের শক্তি ব্যবহার করে, আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর অনৈতিক চাপ প্রয়োগ থেকে শুরু করে টেন্ডারবাণিজ্য, জোরপূর্বক সরকারি জায়গা দখল, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজার নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবহণ ব্যবসা বাগিয়ে নেওয়াসহ আরও নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়, এমন ক্ষেত্রগুলো নিজের দখলে নিয়ে নেয়। তারা এ ধরনের কার্যক্রম বিনা বাধায় পরিচালনার উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকে একটি অদম্য শক্তি হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। এটি যে জনগণ বুঝতে পারে না, তা নয়। তবে জনগণের কোনো স্বার্থ সম্পৃক্ত থাকুক বা নাই থাকুক, রাজনৈতিক দলের ওপর ভর করে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি নিয়ম-নীতিবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা করে নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়ে থাকে।
এসব করে থাকে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে। এ ধরনের বেপরোয়া রাজনীতির নামে একদল লোক দুর্বৃত্তায়নমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যায়, এক ধরনের বিনা বাধায়। এদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণে কোনো শিক্ষার ছাপ থাকে না বললেই চলে। যখন যে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন থাকে, তখন সেই দলের নেতাকর্মী সেজে কেউ কেউ এসব অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। অনেক সময় এ ধরনের বেআইনি কার্যক্রমে শাসক দলেরও পরোক্ষ সম্মতি থাকে। কারণ, শাসক দলের অনেকেই এসব নিয়ম-নীতিবহির্ভূত আয় থেকে ভাগবাটোয়ারা পায় বলে অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও খবর বের হতে দেখা যায়। পরিতাপের বিষয় হলো, ক্ষমতার পালাবদল হলেও এসব সুবিধাভোগীর কোনো বদল হয় না। বরং তাদের লুটপাটের চরিত্র পূর্বাপর একই থাকে। অনেক সময় শুধু লুটপাটের হাত বদল হয় মাত্র। এতে দেশের জনগণের কখনোই কোনো উপকার হয় না।