আগামীতে কি নতুন দল সরকার গঠন করবে?

বিডি নিউজ ২৪ আমীন আল রশীদ প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৪৭

গত জুলাই মাসের শেষ দিকে যখন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিল এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গদি নড়বড়ে হয়ে গেল, তখন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা যুক্তরাষ্ট্রের টাইম টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটতে পারে। আবার পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোও পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। এটা হতেও পারে, না-ও হতে পারে।” অর্থাৎ তিনি কথাগুলো বলেছেন খুব কৌশলে।আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতো– বৃষ্টির সম্ভাবনার মতো, বৃষ্টি হতে পারে, নাও হতে পারে। এই ধরনের কথাকে অর্থহীন মনে করা হলেও রাজনীতি ও কূটনীতিতে এই মাঝামাঝি কথারও গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে যখন এই ধরনের কথা কোনো মার্কিন কূটনীতিক বলেন।


ড্যান মজিনা ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে। এটা ভাঙা উচিত। এ জন্য প্রয়োজন অর্থপূর্ণ সংস্কার।” এখানে ‘অচলাবস্থা’ ও ‘সংস্কার’ শব্দ ‍দুটি খেয়াল করা দরকার। সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানে যেসব স্লোগান উচ্চারিত হয়েছে, যেসব কথা বলা হয়েছে, যেসব সংকটের সমাধান দাবি করা হয়েছে তার অন্যতম এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার আড়ালে একদলীয় শাসনের ভেতরে ঢুকে দেশের রাজনীতিতে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য যে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন— ওই কথাটি অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে।


এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দগুলোর একটি হলো ‘সংস্কার’। অতএব একজন মার্কিন কূটনীতিক যখন অচলাবস্থা ও সংস্কার শব্দ ব্যবহার করেন, তখন বুঝতে হবে তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এবং এখানে কী হচ্ছে ও কী হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল।তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ধারণাটি এখন আর গোপন কোনো বিষয়ও নয়।


বাস্তবতা হলো, ড্যান মজিনা যখন বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করলেন, তখনও দেশের অধিকাংশ মানুষ এটি কল্পনাও করেনি যে শেখ হাসিনার মতো একজন প্রবল পরাক্রমশালী শাসককে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরিয়ে দেওয়া যাবে এবং আওয়ামী লীগের মতো একটি বিরাট দলকে ক্ষমতাচ্যুতই শুধু নয় বরং দলটির শীর্ষ থেকে মাঝারি পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে অথবা আত্মগোপনে চলে যেতে হবে।



বিএনপি-জামায়াতের পুনরুত্থান


রাজনীতিতে যে শেষ কথা বলে কিছু নেই তার বড় উদাহরণ বিএনপি ও জামায়াত। এই দুটি দলকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করে দিতে আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৫ বছরে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দল। আর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাসহ নানা অভিযোগে যে জামায়াতে ইসলামী একসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ ছিল— ওই দলটি এখন এতটাই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে যে, অনেকেই এটা মনে করেন আগামী নির্বাচনে তারা হয়তো এককভাবেই তিনশ আসনে প্রার্থী দেবে এবং অনেক আসনে জয়লাভ করবে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ এরকমও মনে করেন যে, আগামী নির্বাচনে জামায়াত সরকার গঠনের মতো আসনও পেয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটি এখন পর্যন্ত সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। তবে এটা ঠিক যে, জামায়াত এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর।


জাতীয় নাগরিক কমিটি


গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের মাস দেড়েক পরেই ৫৫ সদস্যের ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নামে যে ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে, তার আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন— যারা ওই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবি পার্টির সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনেরও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। আর আখতার হোসেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক। তিনি ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক।


এই কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন কমিটি ঘোষণার পর বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করছে। অচিরেই সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে তারা আলোচনা করবে। তৃণমূল পর্যন্ত এ কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর মাধ্যমে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন


সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন বাম ও অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করলেও দৃশ্যত এর নেতৃত্বে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যে কারণে এই অভ্যুত্থানকে বলা হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন। অর্থাৎ এই আন্দোলনে ছাত্ররা মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও বিরাট সংখ্যক শিক্ষক, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলেরও যে এখানে সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল সেটি বোঝানোর জন্য এককথায় এটিকে বলা হচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন।


মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি ঠিক করেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম এখন সারা দেশের মানুষ জানে। তাদের তিনজন (মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ) এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদেও আছেন। আলোচিত নেতাদের মধ্যে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমও এখন দৃশ্যত আখতারদের নাগরিক কমিটির মতো ছায়া বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করছেন। তারা প্রতিনিয়তিই অন্তর্বর্তী সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন। এমনকি সম্প্রতি তিনজন উপেদষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভও হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও