
একদিকে সবচেয়ে দরিদ্র কমিউনিটি, অন্যদিকে লুটের অর্থে প্রাসাদ গড়ছেন অনেকে
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে প্রকাশিত ইনকাম ইনইকুয়ালিটি ইন ইউকে প্রতিবেদনের ২০২৪ সালের সংস্করণে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, জাতিগোষ্ঠী বিবেচনায় দেশটির অভিবাসী ও স্থানীয় কমিউনিটিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করে ভারতীয় ও চীনারা। সবচেয়ে কম আয় করে পাকিস্তানি ও বাংলাদেশীরা। সেখানে ভারতীয়রা প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৭০০ পাউন্ড আয় করেন। আর বাংলাদেশীরা আয় করেন গড়ে ৪১৬ পাউন্ড।
এছাড়া প্রতি সপ্তাহে চীনারা গড়ে ৬৪৩ পাউন্ড, শ্বেতাঙ্গরা ৬৩৫, শংকর জাতিগোষ্ঠী ৬২৭, এশীয় অন্যরা ৫৫৩, কৃষ্ণাঙ্গরা ৫৪৭, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী ৫৪২ ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতরা ৪২৩ পাউন্ড আয় করে। দেশটিতে অবস্থানরত অভিবাসীরা বলছেন, বিনিময় হার বিবেচনায় এ অংক বেশি শোনালেও দেশটিতে জীবনযাপনের ব্যয় অনেক বেশি। বিশেষ করে বাংলাদেশীদের অনেকেই এখন সেখানে বাস করছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। যেমন আবাসন ব্যয় পরিশোধের পর সপ্তাহে বাংলাদেশীরা ৩০৪ পাউন্ড ও পাকিস্তানিরা ৩৪৫ পাউন্ড খরচ করতে পারে।
খানাভিত্তিক মূল উপার্জনকারী ব্যক্তির তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এ প্রতিবেদনে উঠে আসে, দেশটিতে অবস্থানরত জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক কমিউনিটিগুলোর মধ্যে আয়বৈষম্য এখন অনেক বেশি। এমনকি কমিউনিটিগুলোর মধ্যেও বড় মাত্রায় আয়ের বৈষম্য দেখা যায়। জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক আয়বণ্টন বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশটিতে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রায় ৪৩ শতাংশেরই অবস্থান সর্বনিম্ন আয় শ্রেণীতে।
দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী এ ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের বড় একটি অংশ প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী। সেখানে গিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করতেই তাদের জীবনের বড় একটি সময় ব্যয় হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক সিআর আবরার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে যারা যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই ওখানে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কাজ করেন। সেখানে ভারতীয় রেস্টুরেন্ট আছে, বাংলাদেশীদের রেস্টুরেন্ট আছে। বাংলাদেশীদের আয়ের বড় উৎস এটি। সেখানে তাদের আয় যে খুব বেশি তেমন নয়। তবে বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। সে কারণে তারা সেখানে থেকে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যে যাওয়া এ প্রথম প্রজন্ম কষ্ট করছে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মে গিয়ে হয়তো এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রভাবশালী-প্রতাপশালী যারা সেখানে এখান থেকে পাচারকৃত অর্থ বিনিয়োগ করে সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তারা একদিকে যেমন সেখানকার নাগরিকত্বের অপব্যবহার করেছেন, অন্যদিকে এখানকার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছেন। এখন এগুলো লোকসম্মুখে চলে এসেছে। এখন প্রয়োজন হচ্ছে, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে আসা।’