প্রশ্নগুলো দেশের নাট্যাঙ্গন এবং শিল্পকলা একাডেমি ঘিরে

বিডি নিউজ ২৪ আনিসুর রহমান প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:১৮

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনগুলোর মধ্যেও রদবদল এবং নতুন মেরুকরণ দৃশ্যমান হতে থাকে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলা একাডেমি এবং শিল্পকলা একাডেমির মতো বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন নির্বাহী প্রধান বেছে নেওয়া হয়েছে এবং নতুন এই সব নিয়োগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদের নিয়োগও প্রশংসিত হয়েছিল নানা তরফ থেকে। তবে নাটকের নিবেদিত এই মানুষটিকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল কেউ কেউ। নাটকের চর্চা, পাঠদান এবং গবেষণায় দেশ-বিদেশে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সমাদৃত হয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইংরেজি সাহিত্য এবং নাট্যকলা নিয়ে দেশে এবং বিদেশে পড়াশোনা করেছেন। দেশের ভেতরে নাট্যনির্দেশনাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার জন্য দু-একজনের নাম নিতে হলে তার নাম গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারণ করবার প্রয়োজন রয়েছে।


ওই রকম একজন মেধাবী মানুষ শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্ব নিয়েছেন, যিনি কথায় না শুনিয়ে কাজ দেখিয়ে প্রমাণ করবেন, তিনি পেরেছেন— এমনটাই আমার মতো অনেক অভাজনের পর্যবেক্ষণ। তিনি এমন এক সময়ে দায়িত্ব নিলেন, তার আগে লিয়াকত আলী লাকী ছিলেন এই দায়িত্বে। যিনি নানা বিতর্ক আর বিরক্তির জন্ম দিয়ে গেছেন।


আমি এখানে ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ সামনে আনতে চাই। আদতে এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কতটুকু এখতিয়ার বা সুযোগ আছে দেশের সাংস্কৃতিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের? কেবল একজন যোগ্য মানুষ হলেই কি, তিনি তার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারবেন? বেশি দূরে যেতে হবে না। লিয়াকত আলী লাকীর পূর্বে এই পদে ছিলেন কামাল লোহানী। শিল্পকলা একাডেমির ইতিহাসে এরকম যোগ্য, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণাসমৃদ্ধ মানুষ এবং পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই মহাপরিচালককে বেশিদিন কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। অসহযোগিতা শুরু হয়েছিল সংস্কৃতি অঙ্গনের মোড়লদের তরফ থেকেই।


এরপর ভদ্রলোক লাকী এলেন। তিনি ছিলেন একাধারে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিও। নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী তার জন্য সঙ্গত ছিল সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়া। তিনি তা না করে সভাপতির পদটিও আঁকড়ে ধরেছিলেন। এর মধ্যে পরিবর্তিত বাস্তবতায় গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন সভাপতি হিসেবে লাকী ইনাম দায়িত্ব নিয়েছেন। একইসঙ্গে ফেডারেশনের পুনর্গঠন বা সংস্কারের জন্যে নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক মামুনুর রশীদকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।



অন্যদিকে শিল্পকলা একাডেমির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক একাডেমির আইনকে যুগপোযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছেন। দুটো উদ্যোগের পেছনেই ইতিবাচক কারণ আছে বলেই কতগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসতে চাই।


শুরুর প্রশ্নগুলো গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনকে ঘিরে। ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করা এই সংগঠন দেশের মঞ্চ নাট্যদলগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাবি করে আসছে। প্রায় সাড়ে চার দশকের ইতিহাসে দেশের নাটক চর্চাকে সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে এবং নাট্যচর্চায় পেশাদারি উৎকর্ষ, বিকাশ এবং প্রসারের নিমিত্তে উল্লেখ করার মতো কোনো সাফল্য এই ফেডারেশনকে ঘিরে কি আমাদের সামনে আছে? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলায় স্নাতক বা স্নাতকোত্তর করে একজন তরুণকে যদি অন্যবিধ পেশা বেছে নিয়ে রুটিরুজি চালাতে হয়, তাহলে নাট্যকলায় পড়ার মাজেজা কী? এই প্রশ্নটি নিয়ে থিয়েটার ফেডারেশন কার্যকর কোনো দাবিনামা যথাযথ জায়গায় উত্থাপন করেছিল কি বিগত সাড়ে চার দশকে?


আদতে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনসহ দেশের গোটা সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছিল প্রায় এক ডজন করপোরেট ঠিকাদারি মোড়লের হাতে। সরকার বদলেছে, রাজনৈতিক হাওয়া বদলেছে, কিন্তু এদের নড়চড় হয়নি। বিগত সাড়ে চার দশকে সবথেকে উপেক্ষিত হয়েছে তরুণ সমাজ। এই সময়ে দুটি প্রজন্ম বের হয়ে আসবার কথা। খোদ রাজধানী ঢাকা প্রায় দুই কোটি মানুষের জনপদ। অথচ এর বিপরীতে উল্লেখ করার মতো মঞ্চনাটকের জায়গা কেবল মহিলা সমিতি এবং শিল্পকলা একাডেমি। দরকার ছিল গোটা নগর সংস্থার প্রতিটি ওয়ার্ডে নাটক মঞ্চায়ন ও প্রদর্শনীর জন্যে নিজস্ব আয়োজন থাকা। দুর্ভাগ্যের হলেও আমাদের নগরে ওই বিধিব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।


এই পর্যায়ে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে আধুনিক নাট্যচর্চায় পেশাদারি বিকাশ কীভাবে সাধিত হয় তার কয়েকটা নমুনা সামনে নিয়ে আসতে চাই।


প্রথমেই উল্লেখ করতে চাই আয়ারল্যান্ডের কথা। দেশটির রাজধানী ডাবলিনের কেন্দ্র এবং প্রান্তের শহরতলীর নাট্যশালাগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে বছর বছর নতুন নাট্যকার, নাট্যনির্দশক এবং অভিনেতা অভিনেত্রী তুলে ধরার মধ্যে।


অন্যদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসা রাষ্ট্র জর্জিয়ার বাটুমি নামক একটি শহরে প্রতিবছর দেশের নাট্যশালাগুলো নতুন নাট্যকারের প্রথম নাটক, নতুন নির্দেশকের প্রথম প্রযোজনা নিয়ে হাজির হয় নাট্যউৎসবে।


এবার নজর ফেরাতে চাই পাশের দেশ ভারতের দিকে। ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিবন্ধিত নাট্যদল এবং নাটশালাগুলো নতুন নাটক প্রযোজনার নিমিত্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ পেয়ে থাকে। যা দিয়ে নির্দেশকসহ প্রায় পনেরোজন কলাকুশলীর রুটি-রুজির বড় একটা অংশের সংস্থান হয়ে যায়। এতে করে নাটকের পেশাদারি চর্চা ও বিকাশের পথ অবারিত থাকে। তাতে কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতবাদ চাপিয়ে দেবার ব্যাপার ঘটে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও