সংবিধান বিষয়ে কর্তব্য ও গন্তব্য
জুলাইয়ে সংগঠিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক মহা-জাগরণ। এই জাগরণ আমাদের অতীত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে গুরুতর ও আত্মঘাতী সব ভুলত্রুটি সংশোধন করে নিজেদেরকে পুনর্নির্মাণের এক ঐতিহাসিক সুযোগ সামনে এনে দিয়েছে। তাই এই জাগরণ আমাদের জাতীয় জীবনের সর্ব-সাম্প্রতিক রেনেসাঁ।
রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। অদৃশ্য রাষ্ট্রকে একটি দৃশ্যমান কাঠামোরূপে অবলোকনের সুযোগ করে দেয় যে দলিল, তার নাম 'সংবিধান'। কেননা, সংবিধানে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের উদ্দেশ্য, গঠন, কার্যক্রম ও জবাবদিহিতার রূপরেখা সুনির্দিষ্টভাবে বেধে দেওয়া হয়। তবে আধুনিক সংবিধানসমূহে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে আর তা হলো, (ক) জাতীয় আদর্শসমূহের স্বীকৃতি, (খ) রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের সুনির্দিষ্ট বর্ণনা এবং (গ) নাগরিকদের কতিপয় মৌলিক অধিকারের অলঙ্ঘনীয় স্বীকৃতি। মুক্তিযুদ্ধের পর গৃহীত আমাদের সংবিধানেও উপরোক্ত উপাদানসমূহের উপস্থিতি ছিল।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, সংবিধান শাশ্বত কোনো দলিল নয়, ফলে জনগণ চাইলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন অবশ্যই সম্ভব; তবে সাংবিধানিক আদর্শসমূহের শাশ্বত ব্যঞ্জনা ও আকুতি রয়েছে। একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক মুক্তি অন্বেষণের ধারাবাহিক বিবর্তনের পরিক্রমায় যেসব সাংবিধানিক আদর্শসমূহ দানা বাধে সেগুলোর স্থায়ী গুরুত্ব রয়েছে এবং তাই এগুলোর উপেক্ষা আত্মঘাতী হবে।