যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে লড়াই জমে উঠছে। ঘনঘন পরিবর্তন হচ্ছে জরিপের ফলাফল। কিছুদিন আগেও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস প্রায় প্রতিটি জরিপে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের তুলনায় ভালো অবস্থানে থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গরাজ্য পঞ্চাশটা। এ পঞ্চাশটা রাজ্যের ভেতরে এমন কতগুলো স্টেট বা রাজ্য আছে যেগুলোকে রিপাবলিকান রেড স্টেটস বা রিপাবলিকানদের ঘাটি বলা হয়। এখানে ট্রাম্প প্রচারণা না চালালেও খুব সহজেই জিতে যাবেন। অপরদিকে কিছু রাজ্য আছে যেগুলোকে ডেমোক্রেটিক ব্লু স্টেটস বলা হয়। নিশ্চিতভাবেই সেখানে কমলা হ্যারিস জয়লাভ করবেন।
এসবের পাশাপাশি নীল ও লালের কিছু স্টেটস বা রাজ্য আছে, যারা কখনো ডেমোক্র্যাটদের কখনো রিপাবলিকানদের নির্বাচিত করে। এগুলোকে বলা হয় দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য বা সুইং স্টেট। এরাই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। এরকম রাজ্যের সংখ্যা সাতটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের জন্য শুধু এই সাতটা রণক্ষেত্রের জনমতের হিসেবে নিলেই হবে। নির্বাচনের ফল কার দিকে যাবে তা নির্ভর করছে মূলত ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে পরিচিত কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের ওপর।
এসব রাজ্যের মধ্যে আছে— পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, অ্যারিজোনা, নেভাদা, মিশিগান এবং উইসকনসিন। যেহেতু শুধু নীল বা লালের অধ্যুষিত রাজ্যগুলোর ইলেটোরাল ভোট দিয়ে কোনো প্রার্থীই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন না, ফলে এই দোদুল্যমান রাজ্যগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হার-জিতের নির্ধারক হয়ে উঠবে।
এই সুইং স্টেটগুলোর মধ্যে অন্যতম ১৫টি ইলেকটোরাল কলেজের রাজ্য মিশিগানে ১৯৯২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হওয়া সাতটি নির্বাচনের মধ্যে ছয়বারই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জয়লাভ করে। ২০২০ সালের নির্বাচনেও বাইডেন এখানে জয়লাভ করেছিলেন। তবে ভোটের ব্যবধান বেশি ছিল না। ফাইভ থার্টি এইট ডটকমের সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ী ০.৩ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে ডেমোক্র্যাট শিবিরে।
এখানে ডেমোক্র্যাটদের চিন্তার কারণ হচ্ছেন এখানকার মুসলিম এবং আরব-আমেরিকান ভোটাররা। জনসংখ্যার অনুপাতে মিশিগানে আরব-আমেরিকান বংশোদ্ভূত ভোটারদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গাজা এবং লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ করতে বাইডেন প্রশাসনের নীরবতা রাজ্যটির ৩ লাখ আরব-আমেরিকান ভোটারকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। আর এর জন্য বাইডেনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকেও সমানভাবে দায়ী করছেন তারা। ক্ষুব্ধ এই অংশটি যারা এর আগের নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিতেন তারা এবার কমলার পরিবর্তে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন কিংবা ট্রাম্পকে ভোট দিতে পারে। ফলে জরিপে আপাতত এগিয়ে থাকলেও মিশিগানে স্বস্তিতে নেই কমলা।