পুলিশ সংস্কারে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে
যত দূর জানা যায়, পুলিশের কার্যক্রম প্রথম শুরু হয়েছিল প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায়। আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, সে সময়ে বিশেষায়িত পুলিশের ইউনিট ও তাদের কার্যাবলি বিদ্যমান ছিল। আধুনিক যুগে পুলিশের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি অনস্বীকার্য। তাই পুলিশের সমস্যা, সীমাবদ্ধতা, ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ জেনে ও বিবেচনায় নিয়ে আমাদের একটা বাস্তবধর্মী ও টেকসই পুলিশ সংস্কারের পথে যেতে হবে। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এই লেখায় পুলিশ সংস্কারের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার
পুলিশ যে সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান, সেটা ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের কোথাও বলা হয়নি। অথচ পুলিশি সেবা হলো অনেক উঁচুমানের সেবা। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের মতো পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণকারী পুরোনো আইনগুলোকে হালনাগাদ করার জন্য আইনি পরিবর্তন করা যেতে পারে।
সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার করতে চায় এবং অতীতে ব্যবহার করেছে। এ ধরনের অপপ্রয়াস থেকে পুলিশকে মুক্ত রাখতে হবে। পুলিশের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে এ বাহিনীকে আরও স্বায়ত্তশাসিত, স্বচ্ছ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে হবে।
জনবান্ধব পুলিশ তৈরি
এ দেশের পুলিশকে সবার আগে জনবান্ধব হতে হবে। এ জন্য পুলিশকে জনগণের সঙ্গে মিথস্ত্রিয়া বাড়াতে হবে এবং মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। এসব বিষয় অর্জন করতে হবে কাজ দিয়ে, সেবা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে। পুলিশ কর্মকর্তা বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সব দল, মত, ধর্ম এবং বর্ণনির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং হতে পারে এক কার্যকর পন্থা। তাই কমিউনিটি ও বিট পুলিশিংয়ের সেটআপ তৈরি, তাদের অফিস, প্রশিক্ষণ ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
শক্তি প্রয়োগ, মানবাধিকার ও জবাবদিহি
পুলিশের শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের শক্তি প্রয়োগের নীতিমালা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে, অর্থাৎ সর্বনিম্ন শক্তি প্রয়োগ, সমানুপাতিক হারে শক্তি প্রয়োগ, যৌক্তিক বা আইনসিদ্ধভাবে শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। এই শক্তি প্রয়োগের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এখানে একটু বলে রাখা দরকার, জাতিসংঘের শক্তি প্রয়োগের নীতিমালায় জবাবদিহির ক্ষেত্রে শুধু যাঁরা শক্তি প্রয়োগ করছেন শুধু তাঁরা নন, যাঁরা পরিকল্পনাকারী, যিনি তাঁর কমান্ডার বা নির্দেশদাতা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানকারীরাও এর দায় এড়াতে পারেন না।
দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এগুলো থেকে উত্তরণের জন্য মানবাধিকার সংস্থা এবং পুলিশের ভেতরের ও বাইরের পর্যবেক্ষণগুলো (ওভারসাইট) জোরদার করতে হবে।
প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি
বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্যের একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেগুলোর মধ্যে পুলিশিং কৌশল আধুনিকীকরণ, নতুন প্রযুক্তিতে প্রবর্তন, মানবাধিকার, সন্ত্রাসবাদ, সাইবার অপরাধ, মাদকাসক্তি ও মাদক পাচারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব ও সম্মান, প্রেরণা ও প্রেষণা, জনগণের মনস্তত্ত্ব, গণজমায়েত ব্যবস্থাপনা, বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান, আবেগগত বা মানসিক বুদ্ধিমত্তা, শৃঙ্খলা, সততা ও সাধুতা, সংহতি, বন্ধন ও ঐক্য, নিজের ইউনিট এবং ডিপার্টমেন্টের প্রতি ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ও দেশকে ভালোবাসা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখযোগ্য।