তিনবার বিসিএস দেওয়ার সুযোগে কি মেধাবীদের দেশে রাখা যাবে
প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনার জন্য আমার কাছ থেকে সুপারিশপত্র (রিকমেন্ডেশন লেটার) নিয়ে থাকেন। গত এক সপ্তাহে এমন পত্র দিয়েছি চারজনকে।
এই লেখাটি যখন লিখছি, তার ঠিক কিছুক্ষণ আগেও আমার বিভাগেরই স্নাতকপড়ুয়া দুজন শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে দেখা করে বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির বিষয়টি জানান।
তারা দুজনেই স্নাতক শেষ করার পরপরই বিদেশে (স্নাতকোত্তর) উচ্চশিক্ষা নিতে চায়। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, দেশে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন না করে বিদেশে করার আগ্রহের মূল কারণ কী?
তারা দুজনেই আমাকে জানায়, এখন তো সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর এবং বিসিএস দেওয়া যাবে সর্বোচ্চ তিনবার। এ জন্য তারা স্নাতক শেষ করেই প্রথমে দু-তিন বছর ভালো কোনো দেশে গিয়ে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।
এ ক্ষেত্রে যদি প্রথমেই দু-তিন বছরের মধ্যে সফল হতে না পারে, তখন তারা দেশেই সরকারি চাকরি তথা বিসিএস পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে। আর যদি ভালো কোনো দেশে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পেয়ে যায়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। পরবর্তী সময়ে তাদের চেষ্টা থাকবে সেখানে আশানুরূপ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া এবং সেখানে চাকরি নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করা।
মূলত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারিত হওয়ার পর এই প্রথম এমন একটি ধারণা আমার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পেলাম।
তিনবার বিসিএস দেওয়ার সুযোগ এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ হওয়ায় আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিকল্প হিসেবে ইউরোপ কিংবা আমেরিকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ভর্তি হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন।
এমনকি অনেকেই স্কলারশিপ ছাড়াই যেতে চান। সেখানে গিয়ে পড়াশোনা চলাকালীন চাকরি করে শিক্ষা খরচ চালাতে চান।
আমি বেশ কয়েক দিন ধরে দেশের মেধা বিদেশে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। আগে একসময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই সরকারি চাকরির জন্য একপ্রকার চাকরির প্রস্তুতির লড়াই শুরু করে দিত।
সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ এবং তৎপরবর্তী নাগরিকত্ব সুবিধা লাভ করার প্রবণতা। এবার আরও নতুন একটি ধারণা আমার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পেয়ে আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর হওয়ায় এবং সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএস দেওয়ার বিষয়টির সঙ্গে মেধা পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।
গত বছর আমি আমার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ক্যারিয়ার-বিষয়ক একটি লাইভ আড্ডা অনুষ্ঠানে এমন একজন অতিথিকে যুক্ত করেছিলাম, যিনি পরপর চারটি বিসিএস দেওয়ার পর চতুর্থবারের বেলায় পুলিশ ক্যাডার হয়েছেন।
এমন অভিজ্ঞতা গত সপ্তাহে আমি আমার ফেসবুক পেজের একটি পোস্টে শেয়ার করায় সেখানে একজন সাতবার বিসিএস দিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। সেখানে আরও একজন মন্তব্য করেন, ‘সাধারণত একজন শিক্ষার্থী প্রথমবার বিসিএস দেয় স্নাতক পরীক্ষা শেষ করে অ্যাপিয়ার্ড (মৌখিক পরীক্ষা শেষের সনদপত্র) সনদ নিয়ে অথবা ফলাফল প্রকাশের পরে কিন্তু স্নাতকোত্তর পরীক্ষার আগে, দ্বিতীয়বার দেয় স্নাতকোত্তর পরীক্ষা চলাকালীন অথবা পরীক্ষার কিছুদিন আগে কিংবা পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই। স্বাভাবিকভাবেই উক্ত দুবারে প্রস্তুতি থাকে ২০ শতাংশের নিচে। এখন এই দুবার যদি কাউন্ট করা হয়, তাহলে তো আমরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হব। সবচেয়ে বড় কথা, এখন অধিকাংশ প্রথম শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিও বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে হয়ে থাকে।’
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিসিএস পরীক্ষা
- অংশগ্রহণ