বিজয়ের গালে চপেটাঘাত
গণ-আন্দোলন কেন্দ্রিক দুটি হত্যার সংবাদ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন মনে করছি। প্রথমটি হলো, জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণ-আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনকার কথা। ৫ আগস্ট নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় আন্দোলনকারী গণমানুষ একজন পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করে। ওই দিনই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়। বিজয় হয় আন্দোলনের। গণ-আন্দোলনের বিজয়ের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৫ আগস্ট সোনাইমুড়ি থানার কনস্টেবল হত্যার বিষয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করে। সেই মামলায় এক কিশোর ও দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং পুরনো কায়দায় ১৬৪ ধারায় আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে ১২ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়।
এ ঘটনার দুই দিন পরে অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর টেলিভিশনে দেখলাম আরেকটি খবর। গণ-আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিরস্ত্র এক যুবক পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে দুই মাস মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত হওয়ার কাহিনি। টিভির পর্দায় যুবকের বাবার বুকফাটা চিৎকার শুনলাম। তিনি বলছিলেন তার ছেলে পুলিশের টিয়ার গ্যাসে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সশস্ত্র পুলিশ দলবেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে লাঠিপেটা করে তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। সেই অবস্থায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা করেও তাকে মৃত্যুর হাত থেকে ফেরানো যায়নি।
এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রংপুরের আবু সাঈদ থেকে শুরু করে যে সহস্রাধিক আন্দোলনকারী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্মীদের হাতে খুন হয়েছে, তার প্রতিটি মৃত্যুই ছিল এক একটি লোমহর্ষক ঘটনা। এসব ঘটনা আমরা আন্দোলনের মাঠে দেখেছি এবং টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি।
আলোচনার প্রথম ঘটনায় অর্থাৎ সোনাইমুড়ি থানা পুলিশ হত্যার ঘটনায় আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার এবং ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি আদায় করে আদালতে উপস্থাপন। এই আলামত সুখকর নয়। এটিকে একটি অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে শুধু সোনাইমুড়ি থানাই আক্রান্ত হয়নি বা ওই থানার একজন পুলিশ সদস্যই মারা যায়নি। ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান হাতিয়ার পুলিশ বাহিনীকে আন্দোলনে নামা এসব কিশোর-যুবক ছাত্র সমাজ এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ পরাস্ত করতে পেরেছিল বলেই সেই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এসেছে নতুন বাংলাদেশ। সেই বিজয় আনতে সহস্রাধিক আন্দোলনকারী শহীদ হয়েছেন।
তাদের নির্মমভাবে খুন করেছিল ফ্যাসিবাদী সরকারের রাজনীতিক দলের কর্মী এবং সেই সরকারের পোষ্য এই পুলিশ বাহিনীর একটি গ্রুপ। আর সেই গ্রুপটি যদি আন্দোলনকারীদের খুনি বানিয়ে বিজয় লাভ করে তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা গণ-আন্দোলনের বিজয় কলঙ্কিত হবে। যার জন্য এই ঘটনাটিকে একটি অ্যাসিড টেস্ট বলে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই টেস্টে উত্তীর্ণ হতে পারলে বিজয়ের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করার সময়ের ব্যাপার মাত্র।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সরকার পতন
- পুলিশ হত্যা
- গণঅভ্যুত্থান