দেশে শিক্ষার নিম্নমান ও তরুণদের বিদেশমুখিতা

যুগান্তর চপল বাশার প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৭

বাংলাদেশের তরুণ সমাজ, বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার ঝোঁক রয়েছে অনেকদিন থেকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা উন্নত দেশগুলোয় উচ্চশিক্ষার জন্য যান, কয়েক বছর লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হন। তারপর আর দেশে ফিরে আসেন না, বিদেশেই থেকে যান, সেখানে চাকরি করেন ভালো বেতনে। দেশের মেধাবী সন্তানরা এভাবেই দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। একেই বলা হয় মেধা পাচার। এর ফলে দেশ ক্রমেই মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে।


মেধা পাচার নিয়ে বিজ্ঞজনরা কথা বলে আসছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন, লেখালেখিও কম হয়নি। কিন্তু মেধা পাচার বন্ধ হচ্ছে না, কমছেও না। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই বেশি বিদেশমুখী। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরই বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর চিন্তাচেতনায় থাকে কীভাবে বিদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ভর্তি হওয়া যায়। যারা মেধাবী, তারা সহজেই বিদেশের কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে যান। তাদের অভিভাবকরা আপত্তি করেন না, বরং সন্তানকে যথাসাধ্য আর্থিক সহায়তা দেন। কষ্ট করে হলেও অভিভাবকরা সন্তানের লেখাপড়ার জন্য বিদেশে টাকা পাঠান। প্রয়োজনে ধারকর্জ করেন, সম্পত্তি বিক্রি করেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা থাকে একটাই-সন্তান যেন উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অভিভাবকের টাকায় বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে অনেকেই আর দেশে ফিরে আসেন না। মাঝেমধ্যে দেশে আসেন মা-বাবাকে দেখতে, আবার ফিরে যান। বিদেশে থেকেই মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কিন্তু অভিভাবকরা সন্তানের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত হন। এমন পরিবারও আছে, যাদের সব সন্তানই বিদেশে গিয়ে স্থায়ী হয়েছে। বৃদ্ধ মা-বাবা নিঃসঙ্গ অবস্থায় বাড়িতে পড়ে আছেন। তারপরও অভিভাবকরা সন্তানকে বলেন না, ঘরে ফিরে এসো। কেন বলেন না?



কেন ওরা বিদেশমুখী


অভিভাবকরা কেন সন্তানকে বিদেশ ছেড়ে দেশে ফিরতে বলেন না, এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে আগে বুঝতে হবে কেন তারা বিদেশমুখী। আমাদের সন্তানরা বিদেশমুখী হয়েছে এবং হচ্ছে পরিস্থিতির কারণে। মেধাবী শিক্ষার্থী, যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী, তারা দেশে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ পান না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও সেখানে মন দিয়ে লেখাপড়া করার পরিবেশ কি আছে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় লেখাপড়া করার সুষ্ঠু পরিবেশ কবে ছিল, সেটা জানতে হলে গবেষণা করতে হবে। অতীতের দিকে ফিরে তাকালে আমরা কী দেখি? প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত ও গোলযোগ ছিল নিয়মিত ঘটনা। শিক্ষাঙ্গনে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল সাধারণ দৃশ্য। শিক্ষক-অধ্যাপকরাও দলাদলির ঊর্ধ্বে থাকতে পারেননি। এ সবকিছু আমাদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে।


আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণার সুযোগ-সুবিধাও সীমিত অথবা নেই। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা শেষে কোনো শিক্ষার্থী পিএইচডি গবেষণায় আগ্রহী হলেও পর্যাপ্ত সুবিধা দেশে পান না। তখন তারা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং সুযোগও পেয়ে যান। পিএইচডি করার পর অনেকে বিদেশেই চাকরি পেয়ে থেকে যান। যারা দেশে ফিরে আসেন, তারাও ভালো চাকরি না পেয়ে আবার বিদেশমুখী হন।


মেধাবীরা দেশে উপযুক্ত মর্যাদা ও কাজের সুযোগ না পেলে বিদেশমুখী হবেন, এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্র ও সরকারের কর্তব্য মেধাবীরা যাতে দেশেই থাকেন, এর ব্যবস্থা করা। এজন্য তাদের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে দেশে রাখতে হবে, যাতে তারা রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন।


বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে আমরা নেই


যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং প্রকাশ করে। সম্প্রতি তারা যে তালিকা প্রকাশ করেছে, এর প্রথম ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। সেরা ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আছে আমাদের প্রতিবেশী ভারতের ২২টি ও পাকিস্তানের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের দেড়শ বিশ্বদ্যিালয়ের মধ্যে একটিও এ তালিকায় স্থান পায়নি। কত বড় লজ্জা আমাদের জন্য! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে গর্ব করতাম একসময়। সেই গর্ব কবেই ধুলোয় মিশে গেছে। এখন সেরা ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার শেষ প্রান্তেও আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেল না। স্থান পেয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। আমরা, অর্থাৎ ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও জনগণ লজ্জা পাচ্ছি। কিন্তু কর্তাব্যক্তিরা, যারা নীতিনির্ধারক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, তারা লজ্জা পাচ্ছেন কি? মনে হয় না। টিএইচই বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণ করে যেসব বিষয়ের ভিত্তিতে, এর মধ্যে অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পরিবেশ, গবেষণার মান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও গ্রহণযোগ্যতা। এসব মানদণ্ডের কোনোটিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় টিকতে পারেনি। তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও