পাঠ্যবইয়ের ‘এই সব’ বাধা কাটবে কীভাবে

প্রথম আলো ড. নাদিম মাহমুদ প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:২৬

পাঠ্যবই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থেমে নেই। শেখ হাসিনা সরকারের সর্বশেষ করা ‘নতুন শিক্ষাক্রম’কে বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রণীত বইগুলোর পরিমার্জন ও সংস্করণের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তা ‘ধর্মীয় গোষ্ঠীদের’ বাধার মুখে বাতিল করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে কারা থাকবে, কীভাবে লেখা হবে, তা নিয়ে এর আগে প্রথম আলোয় বিস্তারিত লিখেছি। তবে পাঠ্যবই নিয়ে আলেমদের অংশীজনের অংশকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক আবর্তিত হয়েছে, তা অতীতেও হয়েছে।


বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে পাঠ্যপুস্তককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে শিক্ষার্থীদের ‘ধর্মকে’ অনুসরণ করানো যাবে। আসলে কি তা-ই? পাঠ্যপুস্তকে ‘ধর্মীয়’ অনুশাসনের অংশ ধরা হলে গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার তাদের প্রণীত পাঠ্যপুস্তকে শেখ মুজিবুর রহমানকে যেভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে সামনে আনা হয়েছে, স্কুলের শপথকে পরিবর্তন করেছে, তাতে কি আমাদের সন্তানদের শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে, নাকি মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করতে পেরেছে? দিন শেষে ‘রাজাকার’ শব্দটি ব্যবহারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে শেখ হাসিনা সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছে।


এই দেশে যখনই পাঠ্যপুস্তকে সংস্কার করার চেষ্টা হয়েছে, তখন থেকে নানা কারণে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কখনো এনসিটিবি নিজে করেছে, আবার কখনো ধর্মীয় ভাবাদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে সরকার করেছে।


পাঠ্যপুস্তকে যেসব বিতর্ক ছিল


২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধর্মভিত্তিক দলগুলো একমুখী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে বলার চেষ্টা করেছিল একমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে দ্বীনি শিক্ষা বাদ দিয়ে খোদাদ্রোহী শিক্ষা চালু হবে (প্রথম আলো ৮ আগস্ট ২০০৯)। এই বাধার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ২০১১ ও ২০১২ সালে পাঠ্যবইগুলোয় ব্যাপক বানান ভুল পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বইগুলো ছিল ভুলে ভরা, যা নিয়ে সেই সময় পত্রপত্রিকায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল।
■ ২০১১ ও ২০১২ সালে পাঠ্যবইগুলোয় ব্যাপক বানান ভুল পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বইগুলো ছিল ভুলে ভরা, যা নিয়ে সেই সময় পত্রপত্রিকায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল।


■ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে। বিভিন্ন সরকার তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের ইতিহাসের অংশগুলো পরিবর্তন করেছে।


■ বইয়ের কাজ মস্তিষ্ককে শাণিত করা। এই শাণিতকরণের জন্য প্রয়োজন নতুন ও পরীক্ষালব্ধ জ্ঞানের উন্মেষ। সেটা করতে না পারলে আমাদের চিন্তাচেতনার বিকাশ সম্ভবপর হবে না।



২০১৭ সালে ইসলামপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের পছন্দকে সরকার গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলোয় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। কোমলমতি শিশুদের জন্য রচিত প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বর্ণ শেখার কৌশলে ‘ও’ বর্ণটি দিয়ে ‘ওড়না’ পরিচয় করানো হয়েছিল, যা লিঙ্গবিষয়ক সংবেদনশীলতার প্রকাশ। এ ছাড়া ‘অ’ বর্ণে ‘অজ’ হিসেবে ছাগলের গাছে ওঠার ছবি নিয়েও সমালোচনা হয়েছিল। এ ছাড়া বাংলা পাঠ্যবই থেকে হিন্দু ও নিধর্মী লেখকদের বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালিদাস রায়, সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, সুকুমার রায়, হুমায়ুন আজাদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জ্ঞানদাস ও ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের লেখা বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল (বিডিনিউজ, জুলাই ৭, ২০১৭)।


পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক শুরু হয় ২০২৩ সালে। বছরের শুরুতে নতুন শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে হুবহু চুরি করে অনুবাদ করা হয়, যা একাডেমিক ভাষায় প্লেজারিজম বা চৌর্যবৃত্তির মধ্যে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রথম আলোয় লেখার পর দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বইটির সম্পাদকেরা গণমাধ্যমে ক্ষমা চান, তবে একই সম্পাদকের রচনায় চলতি বছর নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়েও একই ধরনের ভুলভ্রান্তি দেখা যায়। ভারতের কোচিং সেন্টারের শিক্ষা উপকরণ থেকে কপি করা অংশ এবং ইন্টারনেট থেকে উৎসের প্রাপ্তি স্বীকার না করে অনুবাদ করা হয়েছিল (প্রথম আলো, জানুয়ারি ৩০, ২০২৪)।


পাঠ্যবইয়ে ধর্ম ও বিজ্ঞানে বিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক


ধর্ম ও বিজ্ঞান দুই ক্ষেত্রই মানুষের জীবনদর্শন, চিন্তাভাবনা এবং মূল্যবোধের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় ব্যাখ্যা মূলত সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করলেও বিজ্ঞান মূলত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত তথ্য এবং যুক্তির ওপর নির্ভরশীল। পাঠ্যবইয়ে ধর্মীয় বিষয়বস্তু সংযোজনের সময় ধর্মীয় সংবেদনশীলতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ বারবার উঠেছে। কখনো কখনো পাঠ্যবইয়ে ব্যবহার করা কিছু শব্দ বা বিষয়বস্তু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও