জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বরাদ্দ কি পর্যাপ্ত?
আখলিমা বেগম। বয়স ৬২। থাকেন কড়াইল বস্তিতে। এই বস্তিতে তিন যুগের বেশি সময় ধরে তার বাস। এর মধ্যে তিনি দেখেছেন অনেক কিছু। বাড়ি চাঁদপুরের খলিফাকান্দি। নদীভাঙন তার অতীত স্মৃতি, তবে এখনও সজীব। জিজ্ঞেস করলেই ইতিউতি করে বলা শুরু করেন।
বিয়ে করেছেন নওয়াব আলীকে। তিনিও নদীভাঙনের প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী। নওয়াব আলীর পরিবারের পাঁচ কানি জমি ছিল। বিভিন্ন সময় নদী ভেঙে দিয়েছে সেই জমি, ভিটাবাড়িসহ সবকিছু। ৭/৮ বার ভাঙার পর আখলিমা বেগম-নওয়াব আলীর কোনো সম্বলই আর অবশিষ্ট ছিল না। বড় ভাইয়ের সহায়তায় তারা ঠাঁই নেয় ঢাকায়। নতুন ঠিকানা হয় কড়াইল বস্তি।
নব্বইয়ের দশক থেকে এখনও তিনি কড়াইলে। দুর্যোগপূর্ণ সময় পার করে স্থিতিশীল সময়ের আশায় তিনি। বেঁচে থাকার তাগিদে আখলিমা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। অবশ্য আগে কখনও গৃহকর্মীর কাজ করেননি। সারাদিন কাজ করে পেতেন ৩০০ টাকা। অন্যদিকে, নওয়াব আলী চালাতেন রিকশা। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আগে কি রিকশা চালাতেন? উত্তর, না। রিকশা চালিয়ে দৈনিক আয় হতো ৮০-১০০ টাকা। দুইজনের আয়ে চলতো তাদের এবং পাঁচ ছেলে-মেয়ের। তাদের লেখাপড়া, থাকাখাওয়া ও বিয়ে— সবই হয়েছে দুইজনের আয়ে। পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবাই অল্পবিস্তর পড়াশোনা করলেও সর্বোচ্চ পড়াশোনা করেছেন একজনই, এইচএসসি পর্যন্ত।
আখলিমা বলেন, ‘আমি তো কোনো কামকাইজ পারি না, তয় মাইনষের বাসায় কাম কইরা কোনোরহম শুরু করছিলাম। সারাদিন আরেক বাসায় কাম কইরা আবার কড়াইলে এক বাসায় কাম করতাম। হেইয়ানেও কিছু টাকা পাইতাম। কারণ, আমাগো তো পাঁচডা পোলা-মাইয়া। অল্প আয় দিয়া ওগো পড়াশোনাও বেশি চালাইতে পারি নাই। তয় বড় পোলা মাঝেমইধ্যে ওর বাপেরে সাহায্য করতো।’
নিজ গ্রামে যান কি না— জানতে চাইলে বলেন, ‘৭/৮ বার ভাঙার পর তো আর কিছুই নাই। সব নদীর পানিত তলায় গেছে। বাড়ি যায় না। কই যামু? কিছুই তো নাই।’
সত্যিই তো, আখলিমা-নওয়াব দম্পতির বাড়ি তো নদীর পেটে। শুধু কি তাদের বাড়ি? তাদের পাশের বাড়িঘরও বিলীন হয়ে গেছে নদীভাঙনের কারণে— জানান নওয়াব আলী।