প্রাণ ফিরছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, সঙ্গে শঙ্কাও

বিডি নিউজ ২৪ প্রণবকান্তি দেব প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৯

প্রায় তিনমাসের অধিক সময় পর সচল হতে চলছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ধাপে ধাপে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে পাঠ কার্যক্রমও। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। আশা জাগানিয়া একটি চিত্র। জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানের প্রাণকেন্দ্রে ছিল শিক্ষার্থীরা। রাজপথে মিছিলে-স্লোগানে সক্রিয় ছিল, বুলেটের সামনে দ্ব্যর্থহীনভাবে বুক পেতে দিয়েছিল, পুরো জাতিকে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্নে তুমুল আন্দোলিত করেছিল যে শিক্ষার্থীরা— তারা আবার তাদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফিরছে স্বরূপে। শিক্ষার্থীরা ফিরে আসছে গবেষণাগারে। তারা ফিরছে সহজাত আড্ডায়-বন্ধুত্বে। আসলে এটাই তো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক চিত্র।


বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি স্থান যেখানে এসে পৃথিবীর সকল আলো মিলিত হয়। একটি দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান, জ্ঞানে-গৌরবে সমীহ যাদের করা হয় তাদের স্থান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই কদিন আগেও আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে একটি জাতিকে নতুন পথের দিশা বাতলে দিতে পারে। বস্তুতপক্ষে, একটি দেশ কিংবা জাতি যখন গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়, সেদেশের বিশ্ববিদ্যালয় তখন এগিয়ে আসে মুক্তির বার্তা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় মানে শুধুই কিছু অবকাঠামো নয়, বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতির মননশীলতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সবচেয়ে পবিত্র স্থান।


তবে দেশের ওই গৌরবদৃপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাভাবিক হতে না হতেই তৈরি হচ্ছে অযুত শঙ্কাও। শঙ্কাগুলো নানা রঙা। কিছুটা পাঠকেন্দ্রিক, কিছুটা পাঠের বাইরে। এত বড় একটি অভ্যুত্থান, এত মৃত্যু, ভয়াবহতা, বিভীষিকার স্মৃতি ভুলে শিক্ষার্থীরা কীভাবে পাঠে মনোনিবেশ করবে— তা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তদুপরি, আন্দোলনের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সহপাঠী-সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্কগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাববার বিষয় আছে। আছে সেশনজটের সমূহ সম্ভাবনাও। যেহেতু আগেই বলেছি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে গণমানুষের প্রত্যাশা থাকে আকাশসম, ফলে হতাশাও জন্ম নেয় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটো হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শুরু হয়েছে হলে সিট নিয়ে নানা বিরোধ। র‍্যাগিংও ফিরেছে কোথাও কোথাও।



জুলাই-অগাস্টের রক্তাক্ত দিনগুলোর স্মৃতি মুছতে না মুছতেই এমন ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেবে— এটাই স্বাভাবিক। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি মনুষত্ব্যের শিক্ষা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নীতি, মানবিকতা ও উদারতার শিক্ষা নিয়ে কথা উঠেছে। অন্যদিকে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক কর্তৃক শপথ পাঠের ঘটনাটিও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ শুভবুদ্ধির সকল মানুষ, আগামী দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আধিপত্য নিয়েও আছে শঙ্কায়। আবার কদিন আগেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ঘটা করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রচারণা বাসি হতে না হতেই আত্মগোপনে থাকা ছাত্রনেতাদের প্রকাশ্য হওয়ার খবরে তৈরি হচ্ছে নতুন শঙ্কা।


কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানার ছাড়াই ‘ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে পুরো আন্দোলন পরিচালিত হওয়ার পর খোদ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সমন্বয়করা রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রবণতায় এক নীরব হতাশার জন্ম দিচ্ছে আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়কদের মধ্যে বিভাজন এবং আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। আবার ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আধিপত্য এবং নিয়োগপ্রাপ্ত অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে রহস্য শঙ্কার আগুনে ঘি ঢালছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, দীর্ঘদিন ধরে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু রয়েছে, তার পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ওই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। পাশাপাশি মানুষের ভেতর ওই শঙ্কাও তৈরি হচ্ছে যে, ক্রমেই রাজনৈতিক লড়াইয়ের মূল চাবিকাঠিতে পরিণত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জিজ্ঞাসা ছড়িয়ে পড়ছে, আমরা তবে কোথায় যাচ্ছি? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি তবে পুরনো রূপেই ফিরছে শুধু খোলস পালটে? এত ছাত্র-জনতার আত্মদান কি তবে কিছুই শেখাল না আমাদের? কেন সমাজের মানুষের মধ্যে ‘যা খুশি তাই’ করে ফেলার এক অদ্ভুত মানসিকতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও