আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া সংস্কার সম্ভব?

প্রথম আলো কাজী জাওয়াদ প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:২৬

আসি আসি করে জেনারেল এরশাদ সামরিক আইন নিয়ে এসেই গেলেন ১৯৮২ সালের মার্চে। খাঁটি গণতন্ত্র ও সংস্কারের মাধ্যমে সমাজ বিশুদ্ধকরণের ১৮ দফার ফুলঝুরি পেল বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে সাপ্তাহিক বিচিত্রাকে বলা হলো প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর প্রতিবেদন লিখতে। তাতে যেন ইন্দোনেশীয় গোলকারের ভাবধারায় রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাবাহিনীর ভূমিকায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। একজন কর্নেল তখন গণমাধ্যম সংস্কারের (পড়ুন ‘নিয়ন্ত্রণের’) কাজ দেখাশোনা করছিলেন।


শাহাদত ভাই (সম্পাদক শাহাদত চৌধুরী) আমাকে দিলেন সেই প্রচ্ছদকাহিনি লেখার ভার। ইন্দোনেশীয় দূতাবাসে গিয়ে ‘গোলকার’ ও সরকারের বিষয়ে তত্ত্ব-তালাশ করতে বললেন। যদিও সামরিক জান্তাকে গণতন্ত্রের পূজারি দেখিয়ে ফরমায়েশি লেখা লিখতে মন চাইছিল না। এরপরেও বিচিত্রা ও নিজের চাকরি বাঁচাতে বুকে বিদ্রোহ নিয়ে কাজে নামলাম।


ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকর্নর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইন্দোনেশীয় কমিউনিস্ট পার্টির পাল্টা হিসেবে একদল সেনা কর্মকর্তা ১৯৬৪ সালে কর্মরত দলগুলোর যুক্ত সচিবালয় বা গোলকার গঠন করেন। এর ওপর ভর করেই ১৯৬৭ সালে প্রেসিডেন্ট সুহার্তো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে ৩০ বছর স্বৈরাচারী শাসন চালান।


ইন্দোনেশীয় দূতাবাসে গিয়ে তাদের সরকারি কার্যক্রমের একটি প্রচার পুস্তিকা ও পর্যটনকেন্দ্র বালি সৈকতের কিছু সুদৃশ্য ছবি নিয়ে এলাম। প্রচ্ছদকাহিনির বিষয়বস্তুর সঙ্গে যেগুলোর কোনো সম্পর্ক ছিল না। ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতির সমর্থক ছিলাম। তখন গ্রাম কমিউন সম্পর্কে কিছুটা জেনেছিলাম। তার সঙ্গে কিছু কল্পনা মিশিয়ে লিখলাম থানা পর্যায়ে সংসদীয় পদ্ধতির স্থানীয় সরকারের কাঠামো নিয়ে। তাতে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, থানা কাউন্সিলে একজন বিরোধীদলীয় নেতা থাকবেন। কোনো রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করতে হলে সেই নেতার সম্মতি নিতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি স্থানীয় সরকারের ওপর ন্যস্ত থাকবে। সেভাবে জনপ্রতিনিধিদের ওপর আমলাদের খবরদারি বিলুপ্ত হবে।



প্রতিবেদনের মাধ্যমে আর যা–ই হোক কর্তার ইচ্ছায় কর্মটি হলো না। সামরিক কর্তারা যা লেখাবেন আশা করেছিলেন, ঘটল তার উল্টো। নিজের ওই অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে চাইছি, অন্তর্বর্তী সরকার বা গণ-অভ্যুত্থানে জনগণ যে আকাঙ্ক্ষাই করুক না কেন, যাঁদের দিয়ে সংস্কারের কাজটি করানো হবে, তাঁদের গূঢ় ইচ্ছাই গুরুত্বপূর্ণ।


অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। যে কমিশনগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে কিছু সুপারিশ করবে। প্রশ্ন হলো সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবেন কারা? মূলত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে নিয়োগ ও সুবিধাপ্রাপ্ত আমলা–কর্মচারীরা। তাঁদের আনুগত্য ও সততার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারা যায়? তাঁরা যে সুপারিশগুলো নিজের পছন্দ অনুযায়ী সংস্কার করে বাস্তবায়ন করবেন না, তা কেমন করে জানেন? কাজেই যেকোনো সংস্কার, সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন করার প্রথম কাজটাই হলো প্রশাসন থেকে শুরু করে সবগুলো বিভাগে নতুন সরকারের প্রতি অনুগত লোকবল।


এ বিষয়ে সরকারের ভরসা ছিল স্বৈরাচারী ১৬ বছরে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ইতিমধ্যে তাঁদের মনোভাব ও আচরণ সম্পর্কে আমরা আঁচ পেয়েছি। বঞ্চিতদের মধ্যে স্বৈরাচারের প্রতি সহানুভূতিশীল কিন্তু তৈল প্রদানে অদক্ষ ব্যক্তিরাও থাকতে পারেন। রাজনৈতিক তকমার কারণে বঞ্চিতদের সবারই যোগ্যতা ও দক্ষতা স্বতঃসিদ্ধ নয়।


স্বৈরাচারী সরকারের বিচারের ব্যাপারে জন-আকঙ্ক্ষার একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার। মানুষ শুধু ব্যক্তি হাসিনাকে সরাতে চায়নি, যে দলের সমর্থনে তিনি স্বৈরাচারী হতে পারলেন, তার বিষয়েও প্রশ্ন এসেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল তখন আদালতে বলেছিলেন, দলটিকে নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, স্বৈরাচারী কার্যকলাপের জন্য দায়ী কি শুধুই ব্যক্তি, দলের কোনো ভূমিকা নেই? দলের বিচার হতে পারে না? যা হোক, আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ আইন সংশোধন করে স্বৈরাচারী দলকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব এসেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও