রাষ্ট্রের সংস্কার প্রয়োজন, কিন্তু মনের সংস্কার করবে কে

প্রথম আলো উম্মে ওয়ারা প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৪৮

গত আগস্ট মাসের ৮ তারিখে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে রাষ্ট্রসংস্কার নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করা হচ্ছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক যে সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের, বিভিন্ন পেশার নাগরিকেরা রাষ্ট্র নিয়ে ভাবছেন এবং তাঁদের মতামত জানাচ্ছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন সরকার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণের শেষ অংশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, একটি জাতির সংস্কার শুধু সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। সবাইকে নিজ নিজ জগতে সংস্কারের আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় কল্যাণমুখী একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও সাংবিধানিক সংস্কার—এ ছয় নতুন কমিশন গঠন করার ঘোষণা দেন।


আইন ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে সংস্কারের অবশ্যই প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। সেটি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে আইনব্যবস্থা বাংলাদেশে বিদ্যমান, তা দিয়েই অতিসত্বর কিছু অপরাধকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন, যার মধ্যে ‘মব জাস্টিস’ বা ‘মব লিনচিং’ বলে অধিক পরিচিত অপরাধটির কথা না বললেই নয়। এমন নয় যে এই অপরাধ নতুন করে সংঘটিত হচ্ছে আমাদের দেশে, কিন্তু সম্ভবত এর মাত্রা বেড়ে গেছে ইদানীং।


বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকাণ্ড একের পর এক ঘটতে থাকায় জনমনে একই সঙ্গে আতঙ্ক ও আক্রোশ বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। একজন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন, সেই অপরাধে; আরেকজনকে মুঠোফোন চুরির অভিযোগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ এম হলে তোফাজ্জল নামের কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তিকে ছাত্ররা পিটিয়ে মেরে ফেলেন।



প্রথমে একপ্রস্থ মারার পর হলের ক্যানটিনে রাতে ভাত খাওয়ানোর পর আবার তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এ রকম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জড়িত, তা মেনে নিতে সবার কষ্ট হচ্ছে।


বিশেষ করে এক মাস আগেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, যা একটি ঐতিহাসিক মূল্য রাখে। তার পরপরই ছাত্রদের কাছ থেকে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনকে শুধু বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে না করে, মব লিনচিং নামের এই অপরাধ নিয়ে একটু ভাবার প্রয়োজন আছে বৈকি!


মব জাস্টিস প্রকারান্তরে ‘জঙ্গল জাস্টিস’ বা ‘স্ট্রিট জাস্টিস’ বলেও পরিচিত, যা মূলত একটি দেশে নাগরিকের সামাজিক ও আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিচারব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতি চরম অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশকেই বোঝায়। আঠারো শতকে যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর এ ধরনের হামলার উদাহরণ রয়েছে ইতিহাসে। দুঃখের বিষয়, যে কারও বিরুদ্ধে নৃশংস ও অমানবিক আচরণ দমনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও এখনো যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশে এই অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়।


এই অপরাধের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলো হলো, ভুক্তভোগীর অপরাধের মাত্রার চেয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার বিষয়টি অপরাধীর কাছে বেশি গুরুত্ব পায় এবং শাস্তির ধরন প্রচলিত আইনের চেয়ে অনেক বেশি নিষ্ঠুর ও নির্মম হয়ে থাকে। মব জাস্টিসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, ভিড়ের মধ্যে থেকে এবং নিজের পরিচয় গোপন রেখেও একটি অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করা যায়।


খেয়াল করে দেখবেন, তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডে অনেকের অংশগ্রহণ ছিল এবং তাঁদের অনেককেই এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ডি-ইন্ডিভিজ্যুয়েশন বা বেনামি থেকে নিজের চাওয়া–পাওয়া থেকে ওই মুহূর্তে দলটির চাওয়া–পাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার এই ‘মব মেন্টালিটি’ কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা বুঝতে দুই দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা দুটিই যথেষ্ট!

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও