শান্তির নীড় অশান্ত কেন?
যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকরি করেননি, তাদের অনুভূতি আর আমাদের অনুভূতি কখনোই এক হবে না। তারা আমাদের মতো কখনো মূল্যায়নও করতে পারবেন না পার্বত্য চট্টগ্রাম কৌশলগতভাবে কতটা গুরুত্ব বহন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেও আমাদের আরও অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে। শুধু একক কোনো রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সময়ের আবর্তনে দল বা সরকারসহ সবকিছু বদল হলেও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কৌশল বা নীতি স্থায়ী ও অপরিবর্তনশীল রাখতে হবে এবং সরকার পরিবর্তন হলেও পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা নীতি ও অগ্রাধিকারগুলো পরিবর্তন করা যাবে না।
আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের যেসব ক্যাম্প ও এলাকায় রাত্রিযাপন ও অপারেশনাল কার্যক্রমে (spl ops, LRP, SRP) অংশ নিয়েছি, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো-দীঘলছড়ি ক্যাম্প, শুভলং, ঘনঘোর ক্যাম্প, ক্ষারিক্ষন ক্যাম্প, দীঘিনালা ক্যাম্প, মারিস্যা, মাঝিপাড়া, নিউ লংকর, হালিমপুর, সাজেক, বরকল ও হরিনাসহ আরও অনেক জায়গা। সেসব জায়গার অনেক স্মৃতি গাথা রয়েছে মনে। এসব ক্যাম্পে বসে কত ডায়েরির পাতা লিখে শেষ করেছি; কত প্রেমপত্র লিখেছি, যা কাউকে দেওয়া হয়নি; কত চোখের জল ফেলেছি, যা কেউ দেখেনি; কত ঘাম ঝরিয়েছি, যার গন্ধও কেউ টের পায়নি। তবুও কোনো আবেগ-অনুভূতির পরোয়া করিনি, কারণ একবুক গর্ব নিয়ে গহিন অরণ্যের পথে-প্রান্তরে, খাদের কিনারে, ঝরনাধারায় সিক্ত পথে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উপেক্ষা করেছি এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করছি।
সত্যিকার অর্থে সামরিক ভ্রাতৃত্ববোধ কী, তা কেবল সমরযুদ্ধে অথবা পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সন্ত্রাসীবেষ্টিত ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় একসঙ্গে কাজ করলেই বুঝতে সহজ হবে। কে আপনার জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করতে সংকোচবোধ করবে না, তা খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় চাকরি করলেই টের পাবেন। আর এমন অফিসার বা সেনাসদস্যকে জীবনে কোনোদিন ভুলতে পারবেন না, বরং সেই সহযোদ্ধারা বসবাস করবে আপনার অন্তরের অন্তস্থলে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পার্বত্য চট্টগ্রাম