মগজের সংস্কার হবে কীভাবে!

www.ajkerpatrika.com অরুণ কর্মকার প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:২৬

মগজ বড় বিচিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ এক বস্তু। মানুষের এবং সমগ্র প্রাণিকুলের তো বটেই, এমনকি যন্ত্রেরও। কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের মতো। একটু গড়বড় হলেই আর কোনো প্রোগ্রাম ঠিকঠাক চলবে না। সব উল্টাপাল্টা এলোমেলো হয়ে যাবে। কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক এবং প্রাণিকুলের মগজের মধ্যে এই তুলনাটি অবশ্য উদাহরণ হিসেবে অতি সাধারণ। কারণ, এই দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান দুস্তর। হার্ড ডিস্কে গোলমাল হলে তা মেরামত করা খুব কঠিন নয়। দরকার হলে বদলেও ফেলা যায়। কিন্তু মগজ বদলে ফেলার উপায় নেই। এমনকি মেরামত করাও দুরূহ। বিশেষ করে ধোলাই হওয়া মগজ।


কয়েক যুগ ধরে আমাদের সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সর্বত্র যেসব কাণ্ডকারখানা দেখে আসছি এবং এখনো দেখতে পাচ্ছি, দেখে যাচ্ছি তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে নিশ্চয়ই আমাদের মগজে কোনো গোলমাল হয়েছে। ক্রমাগতভাবে ধোলাই হতে হতে একেবারে আমূল বদলে গেছে আমাদের মগজগুলো। না হলে একজন প্রয়াত মানুষের কবর ভাঙচুর করা, সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কে কবে দেখেছে এই দেশে? কিংবা পৃথিবীর কোথাও? কার কবর সেটি বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, সেটা কবরস্থান এবং আমরা সেটাকে পবিত্র বলে মানি। মগজে ব্যাপক গোলমাল না হলে কী করে কেউ এই কাজ করতে পারে?


উদাহরণ আরও আছে। ভয়াবহ উদাহরণ। তোফাজ্জল নামে এক তরুণকে পিটিয়ে মেরে ফেলার আগে তাঁকে ভাত খাইয়ে নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের একদল শিক্ষার্থী। তরুণটি কোনো এক কালে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কোনো এক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তবে সে কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়নি। বছর চারেক ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ঢাকা শহরের ভবঘুরে জীবন ছিল তাঁর। মাঝেমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গেলে এলাকার পূর্বপরিচিতরা তাঁকে খাবার ও কিছু টাকাপয়সা দিতেন। গত বুধবার তরুণটি ফজলুল হক হলে গেলে তাঁকে চোর সন্দেহে আটক করা হয়। তারপর তাঁকে ভাত খাওয়ানোর পর পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। যে বীর পুরুষেরা তাঁকে মেরে ফেললেন, তাঁদের মগজ সংস্কারের যোগ্য আছে বলে মনে হয় না। তবে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে অভিযোগ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা কিছুটা হলেও আশাজাগানিয়া।



গত বুধবারই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়ছে শামীম নামে এক তরুণকে। তিনি নাকি ছাত্রলীগ করতেন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর কাতরানোর শব্দ রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। রাজনৈতিক কারণে কাউকে এভাবে মেরে ফেলা যায়? যেতে পারে যদি যাঁরা করছেন তাঁদের মগজ সংস্কারের অযোগ্য হয়ে যায়। এ ঘটনার ভিন্ন একটি ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা সত্য হলে মোটেই কম ভয়াবহ নয়। এই ভাষ্য অনুযায়ী, শামীমকে বেদম প্রহার করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নাকি তাঁকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এরপর প্রক্টর মহোদয় পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এলে শামীম নিজে হেঁটেই পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। এর এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে। এরপর শামীমের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি মিছিল এবং মানববন্ধনও করা হয়েছে। তাহলে তাঁকে কে হত্যা করল, কীভাবে করল?


এর কয়েক দিন আগে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে একজন নারীকে (মতান্তরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ) লাঞ্ছিত করায় বিশেষ ভূমিকা রেখে যে তরুণ বীর পুঙ্গব তুমুল আলোচিত এবং শেষমেশ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছেন, তাঁর মগজের অন্ধকার কি কোনো কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠের চেয়ে কম? একই মানের মগজ তো এখন আকছার দৃশ্যমান। সামাজিক মাধ্যমে যেমন তাঁদের পদচারণ দোর্দণ্ড প্রতাপশালী, তেমনি রাজপথে-প্রান্তরেও তা মোটেই বিরল নয়। কিংবা যে জনতা নীরবে দাঁড়িয়ে ওই নারীর লাঞ্ছনা দেখেছে, তাদের মগজেরও কি সংস্কার দরকার নেই? অবশ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন প্রতিকারহীন ‘মব কিলিং’-এর জয়জয়কার, রাষ্ট্র কিংবা সরকার নির্বিকার, তখন সাধারণ জনতার পক্ষে দর্শক হওয়াই নিরাপদ বটে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও