এখন ডিমেনশিয়া- আলঝেইমার্স নিয়ে কাজ করার সময়
মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে স্মৃতি বিকৃতি ঘটলে সেটাকে ডিমেনশিয়া বলে। ডিমেনশিয়া স্মরণশক্তি, চিন্তাশক্তি, আচার-আচরণ, বিচার-বিবেচনা, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, স্থান-কাল, অনুভূতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বেশ কিছু রোগের কারণে মস্তিষ্কের পরিবর্তন ঘটে, যা শেষ পর্যন্ত স্নায়ুকোষের ক্ষতি করে ডিমেনশিয়ার সৃষ্টি হয়। আমরা সাধারণত চার ধরনের ডিমেনশিয়া সম্পর্কে জানি। চারটি ধরন হলো আলঝেইমার্স রোগ, ভাসকুলার ডিমেনশিয়া, লিউবডি ডিমেনশিয়া, ফ্রন্টো টেম্পোরাল ডিমেনশিয়া। ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আলঝেইমার্স। এটা মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ ও স্নায়ুতন্ত্রের ধ্বংস করে স্মৃতিশক্তির বিকৃতি ঘটায়।
আলঝেইমার্স রোগের শুরুর দিকে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা প্রায়ই বলতে থাকেন যে এটা বার্ধক্যজনিত সমস্যা, তেমন কিছু না! এই বয়সে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। যেকোনো বয়সে আলঝেইমার্স রোগ হতে পারে, তবে ৬৫ বছরের অধিক বয়সী লোকদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আবার পুরুষের তুলনায় নারীর মধ্যে এই রোগ হওয়ার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে হার্টের যত্ন নিন, ফলমূল, শাকসবজি, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধূমপান বন্ধ করতে হবে, মস্তিষ্কের ব্যবহার বাড়িয়ে তুলুন এবং নতুন কাজ নিয়ে ভাবুন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে, সামাজিক যোগাযোগ রাখবেন এবং সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দিন। নিজেকে সক্রিয় রাখুন, শুয়ে-বসে অলস সময় কাটাবেন না। সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের বেশি অ্যালকোহল গ্রহণ করা যাবে না।
আলঝেইমার্স রোগের চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। তবে রোগীর অস্থিরতা, বিষণ্নতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, হরমোনের সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখতে চিকিৎসকেরা ওষুধ দিয়ে থাকেন। আলঝেইমার্স রোগীর সঙ্গে বসবাস এবং তাঁদের পরিচর্যা কেমন হবে, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা অনেক কম। যাঁরা আলঝেইমার্স রোগীর সেবায় থাকবেন, তাঁদের কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
১. সাধারণ কাজকর্ম ব্যাহত না করে একটা রুটিন প্রণয়ন।
২. স্বাধীনভাবে জীবনযাপনে সহায়তা করুন।
৩. আত্মমর্যাদা রক্ষায় সহায়তা করুন।
৪. হাসিখুশি থাকুন এবং রাখুন।
৫. দৈনন্দিন কাজগুলো সহজতর করা।
৬. দৈহিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিন।
৭. শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতাকে দীর্ঘ করার চেষ্টা।
৮. বর্তমান কার্যক্ষমতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
৯. ব্যক্তিগত যোগাযোগ অব্যাহত রাখুন।
১০. গান শুনতে দিন, স্মৃতিচারণা করুন।
১১. পোষা প্রাণীর সঙ্গে খেলতে দিন।
১২. সম্ভব হলে শিশুদের সঙ্গে কিছু সময় অতিবাহিত করার সুযোগ করে দিন।
সেবাকর্মীকে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
১. রোগীর মতামত নিয়ে তাঁর পছন্দমতো গোসল করাতে হবে। সম্ভব না হলে ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছিয়ে দিতে হবে।
২. ঝামেলামুক্ত সহজ পোশাক-পরিচ্ছদ তাঁর সামনে রাখতে হবে। তিনি যেটা পছন্দ করেন সেটা পরিধানে সহায়তা করতে হবে।
৩. অপিচ্ছিল রাবার সোলের জুতা পরতে দিন।
৪. শৌচকর্ম ও মলমূত্রের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দিনের নির্দিষ্ট একটা সময়ে পায়খানা করানোর চেষ্টা করতে হবে। না করাতে পারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫. রোগীর রান্নাবান্নার শখ থাকলে সহযোগিতা করুন। রান্নার কাজটি আনন্দদায়ক করার চেষ্টা করলে ভালো হবে। ধারালো ছুরি-কাঁচি দূরে সরিয়ে রাখুন।
৬. খাদ্য গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোগী কতবার খেয়েছেন, আদৌ খেয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। খাবার ঠান্ডা না গরম তা নিজের মুখে দিয়ে বুঝতে হবে। খেতে অসুবিধা হলে তাঁকে মনে করিয়ে দিতে হবে কীভাবে খাবার চিবিয়ে খায়। খাবার ছোট ছোট অংশ করে রোগীর মুখে দিতে হবে।
৭. যানবাহনে চলাচলে সতর্ক হতে হবে। রোগী নিজে চালক হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গাড়ি চালাতে দেওয়া ঠিক না।
৮. ময়লা-আবর্জনার ঝুড়ি পরিষ্কার করার সময় নিজে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু ময়লার ঝুড়ির মধ্যে চলে যায় কি না। অনেক সময় রোগী নিজেই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়।
৯. রোগী যখন একই কথা বারবার বলে এবং একই কাজ বারবার করে তখন তাঁকে কৌশলে মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে হবে।
১০. রোগীর ধূমপানের অভ্যাস থাকলে বন্ধ করতে হবে, কারণ যেকোনো সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।
১১. মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে সীমিত পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা যাবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- আলঝেইমার্স