গণআন্দোলনের মাইলফলক

যুগান্তর চপল বাশার প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯

‘সবার জন্য শিক্ষা’-এ দাবি নিয়ে এদেশের ছাত্রসমাজ রাজপথে নেমেছিল বাষট্টি বছর আগে, ১৯৬২ সালে। ছাত্রদের পাশে ছিল জনগণ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছাত্রদের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় বাষট্টির ১৭ সেপ্টেম্বর। সরকারের শিক্ষানীতির প্রতিবাদে সেদিন ঢাকায় ছিল হরতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা রাজপথে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ঢাকা নগরী। একপর্যায়ে পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণ। গুলিতে নিহত হয় স্কুলছাত্র বাবুল, পথচারী মোস্তফা ও ওয়াজিউল্লা। আহত শতাধিক। সেই সময় থেকে প্রতিবছর ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবস’ হিসাবে পালিত হচ্ছে।


বাষট্টি বছর আগের শিক্ষা আন্দোলন, বাবুল-মোস্তফা-ওয়াজিউল্লার রক্তদান বৃথা যায়নি। আইয়ুব সরকার গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল। সবার জন্য শিক্ষার দুয়ার খুলে গিয়েছিল। শিক্ষা এখন আর সুযোগ পাওয়ার বিষয় নয়, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার।


বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ধর্মঘট-হরতাল ছাত্রদের বিজয়ের পথে নিয়ে যায়। রক্তস্নাত ১৭ সেপ্টেম্বর স্বীকৃত হয় গণআন্দোলনের একটি মাইলফলক হিসাবে। ওই শিক্ষা আন্দোলন থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে গণআন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে এবং ক্রমেই তা গতি পায়। গণতন্ত্রের আন্দোলন পূর্ণতা পায় ষাটের দশকের মধ্যভাগে, শুরু হয় স্বায়ত্তশাসন তথা স্বাধিকারের আন্দোলন। এ আন্দোলন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নিয়ে যায় স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে। সেই যুদ্ধে বিজয়ী হয় বাঙালি জাতি, বিশ্বের মানচিত্রে যুক্ত হয় নতুন রাষ্ট্র-স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।


কেন এ আন্দোলন


বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন ছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে। সেনাপ্রধান আইয়ুব খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দখল করেন ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে। জারি হয় সামরিক শাসন। এর পরের বছর ১৯৫৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম শরিফের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের দায়িত্ব ছিল একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার।


শরিফ কমিশনের রিপোর্ট ও সুপারিশ প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে এবং সে বছর থেকেই এটি বাস্তবায়িত হবে বলে ঘোষণা করা হয়। কমিশনের সুপারিশ দেখে দেশের শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ বিস্মিত ও হতবাক হয়ে যান। সব দেশেরই শিক্ষানীতি থাকে। এর লক্ষ্য থাকে শিক্ষার বিস্তার ও সম্প্রসারণ। কিন্তু শরিফ কমিশন যে শিক্ষানীতি তৈরি করেছিল, তা শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য নয়; সেটার লক্ষ্য ছিল শিক্ষার অধিকার সংকোচন করা। সবার জন্য শিক্ষা নয়, সমাজের সচ্ছল ও উচ্চবিত্তরাই শুধু লেখাপড়া করবে, অন্যরা নয়। এটাই ছিল শরিফ কমিশন রিপোর্টের মূল কথা। রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর সমগ্র পাকিস্তানেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়। বেশি প্রতিক্রিয়া হয় বাংলাদেশে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। বাঙালিরা সবসময়েই পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি সচেতন। অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বাঙালি সবসময়েই রুখে দাঁড়িয়েছে, প্রতিবাদ করেছে।



পাকিস্তান রাষ্ট্র তৈরি হয় ১৯৪৭ সালের আগস্টে। আর তখন থেকেই পূর্ব বাংলার বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার। সচেতন বাঙালি শুরু থেকেই বৈষম্য আর অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার থেকেছে। বাংলা ভাষা ও বাঙালির সংস্কৃতি রক্ষার জন্য আন্দোলন চালিয়ে গেছে, যা চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। সচেতন বাঙালি জাতির কাছে শরিফ কমিশনের গণবিরোধী শিক্ষানীতি গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল, এ শিক্ষানীতি যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে শিক্ষার অধিকার শুধু সংকুচিত ও খর্বই হবে না, বরং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে চলে যাবে।


শরিফ কমিশনের রিপোর্ট


শরিফ কমিশনের রিপোর্টে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা একটি অবাস্তব কল্পনামাত্র। বিনামূল্যে কোনো শিক্ষা নয়। শিক্ষা সহজলভ্য হতে পারে না। এর জন্য মূল্য দিতে হবে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করত, শরিফ কমিশন তাই ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার জন্য বলেছে, বিনামূল্যে কোনো শিক্ষা নয়। কমিশন শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের কথাও বলে জোর দিয়ে। উচ্চশিক্ষার প্রসার রোধ করার জন্য যা যা করা দরকার, তার সবই সুপারিশ করে শরিফ কমিশন। যেমন, পরীক্ষায় পাশ নম্বর হবে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ। প্রথম বিভাগ পেতে ৭০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। এইচএসসি ক্লাসে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হতে বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে বলে সুপারিশ করা হয়। এর আগে সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষের অধীনেই এ পরীক্ষা হতো। ডিগ্রি পাস কোর্সের মেয়াদ দুই বছর দীর্ঘকাল থেকেই বহাল ছিল। শরিফ কমিশন এ মেয়াদ বাড়িয়ে তিন বছর করে দেয়। মেয়াদ এভাবে বাড়িয়ে উচ্চশিক্ষাকে নিরুৎসাহিত ও ব্যয়বহুল করা হয়। শরিফ কমিশন ইংরেজি শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে গিয়ে এইচএসসি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ওপর অনর্থক বইয়ের বোঝা বাড়িয়ে দেয়। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ইংরেজিতে সাতটি বই বাধ্যতামূলক করা হয়। আগে এত বই পড়তে হতো না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও