মণিপুরে সহিংসতা, ভারতের দুশ্চিন্তা কি বাড়ছে?
ভারতের মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি অন্তত একবছর ধরেই অশান্ত। মাঝে কিছুটা সময় বিরতির পর সম্প্রতি আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, রাজ্যটির সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। বেসামরিক মানুষের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমনে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করার পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। নিরাপত্তা সংকট ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। রাজ্যের দুটি ব্যাটালিয়নের অস্ত্রাগার থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ এবং যৌথবাহিনী কাজ শুরু করলেও অগ্রগতি সামান্যই।
এখন প্রশ্ন, কী কারণে রাজ্যটির পরিস্থিতি আজ এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে? অনেকেই এর জন্য প্রতিবেশী, বিশেষ করে চীন এবং মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এর পেছনে উসকানি থাকতে পারে বলে মনে করলেও প্রথমেই অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে এমন কোনো অবস্থা বিরাজমান রয়েছে কি না, যা এধরনের ঘটনার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে সেটা মূল্যায়ন করা জরুরি।
আমরা যদি একটু গভীরে গিয়ে দেখি, তাহলে দেখবো সাম্প্রতিক সহিংসতায় মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর সাথে কুকিদের সংঘাত এখানে মুখ্য, তবে ক্ষেত্রবিশেষে কুকিদের সাথে রয়েছে নাগা জাতিগোষ্ঠীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ। সাম্প্রতিক হামলায় যে জায়গাটিতে দুজন নারীর মৃত্যু হয়, তার পাশেই রয়েছে কুকি জনবহুল পার্বত্য জেলা কাংপোকপি। এর কয়েকদিন আগে এক প্রবীণ ব্যক্তিসহ কয়েকজন সশস্ত্র হামলায় নিহত হন, যারা মেইতেই সম্প্রদায়ভুক্ত বলে জানা যায়।
আর এর মধ্য দিয়েই একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, এসবের পেছনে রয়েছে কুকিরা। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে হামলায় দু'পক্ষই ড্রোন, আরপিজি (রকেটচালিত বন্দুক, যা যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হয়) ক্ষেপণাস্ত্রসহ যেসব ভারি অস্ত্র ব্যবহার করেছে সেসবের উৎস কোথায়?
এর উত্তরে স্রেফ এটাই বলা যায় যে বিশ্বে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে যখন সশস্ত্র সংঘাতের পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটে তখন অস্ত্রের জোগান অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয়ভাবেই ঘটতে পারে। তবে সংঘাতের পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা যতক্ষণ সম্ভব না হয়, ততক্ষণ জাতিগত সংঘাত নির্মূলে রাষ্ট্রের ভূমিকা গৌণই থেকে যায়।
অভ্যন্তরীণভাবেই ভারতের উত্তর-পূর্বের সেভেন সিস্টার নামে খ্যাত সাতটি রাজ্যের সার্বিক নিরাপত্তা ভারতের জন্য সবসময় দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাদের জন্য বাফার স্টেট হিসেবে কাজ করায় বৈদেশিক হস্তক্ষেপের সুযোগ থেকেই যায়। সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পূর্বে অভ্যন্তরীণ আর কোনো উপাদান এই সংঘর্ষের পেছনে কাজ করেছে কি না এবং করে থাকলে সেসবের ধরন কী এটাও আলোচনার দাবি রাখে।