
বন্যার পানি আটকে থাকার নেপথ্যে দখল, ৩২৪ কোটি টাকা পানিতে
‘চীনের দুঃখ ছিল হোয়াংহো নদী, নোয়াখালীর দুঃখ নোয়াখালী খাল। চীনের দুঃখ নেই, নোয়াখালীর দুঃখও থাকবে না।’ নোয়াখালী খাল ও জেলার ২৩টি খালের পুনঃখননসহ ১৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকার পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রকল্পের ৩২৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নোয়াখালীর দুঃখ ঘোচেনি। সম্প্রতি বন্যার পানি আটকে নোয়াখালীতে তৈরি হয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়।
নদীবেষ্টিত এ জেলা তলিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সরকারি প্রকল্পে ভয়াবহ কারসাজি ও দখলের চিত্র। নিজেদের দখল ঠিক রাখতে মন্ত্রীর পরিবার পাল্টে দিয়েছে নোয়াখালী খালের গতিপথ। নোয়াখালী খালকে আলগির খালে নামিয়ে দিতে গিয়ে এলাকায় তৈরি করেছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরিবেশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালী খালের ৯ কিলোমিটার সাবেক এমপি ওবায়দুল কাদেরের পরিবার ও রাজনৈতিক কর্মীদের দখলে। যার কারণে মেঘনা নদীতে যাওয়ার আগেই নোয়াখালী খাল বিলীন হয়ে গেছে। নামছে না পানি। ২০১৯ সালে নোয়াখালী খাল সংস্কারে নেওয়া ৩২৪ কোটি টাকার প্রকল্পও ভেস্তে গেছে।
নিজেদের দখল বৈধ রাখতে আলগির খালের দিকে পানি দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন চক্রের। যে কারণে আলগির খাল খননও করা হয়। কিন্তু বন্যার সময় আলগির খালের সামনের বাঁধ কাটতে দেয়নি স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিদল গেলেও তাদের ওপর আক্রমণ করে জনতা। তুমুল বেগে পানি প্রবাহের কয়েকদিন ওই বাঁধের ওপর লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাহারা দেন স্থানীয়রা। পরে যোগাযোগের সড়ক কেটে কিছু পানি সরিয়ে দিতে পারলেও পানিবন্দি নোয়াখালীবাসীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজেলার বড় অংশ এখনো পানির নিচে।