ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সুসমন্বিত করতে হবে

যুগান্তর চপল বাশার প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭

বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ খুব সহজ কাজ নয়। ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি বা পরিবার একাধিকবার ত্রাণসামগ্রী পেয়েছেন; আবার অনেকে একবারও পাননি। বিশেষ করে প্রত্যন্ত দুর্গত এলাকায় এমনটি ঘটে। তাই সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ খুব সহজ নয়। তবুও ত্রাণ বিতরণ আগের চেয়ে অনেক ভালোভাবে চলছে। এ কাজটি শতভাগ সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব, যদি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতায় যথাযথ সমন্বয় থাকে।


ত্রাণ বিতরণের চেয়ে বন্যার্ত মানুষের পুনর্বাসন আরও কঠিন কাজ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দুর্গত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ বসতভিটায় ফিরে দেখতে পান তাদের ঘর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে অথবা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে। সামান্য জিনিসপত্র যা রেখে গিয়েছিলেন, যেটুকু ফসল গোলায় ছিল, সব ভেসে গেছে বন্যায়। মাথার উপর ছাদ নেই, রাত কাটানোর জায়গা নেই, বেঁচে থাকার মতো খাবার নেই-বন্যার্ত মানুষ সব হারিয়ে অসহায়। আশ্রয়কেন্দ্রে তবু মাথার উপর ছাদ ছিল, খাবার পাওয়া যেত, পানীয় জল ছিল; কিন্তু বন্যায় বিধ্বস্ত নিজ বসতভিটায় এসব কিছুই নেই। বন্যার্ত বিপন্ন মানুষ এখন যাবেন কোথায়? তাদের সার্বিক পুনর্বাসনের কাজটি কঠিন হলেও করতে হবে। এ দায়িত্ব রাষ্ট্র, সরকার ও দেশপ্রেমিক সব মানুষের।


দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলা এবার ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। ২০ আগস্ট শুরু হওয়া বন্যায় প্লাবিত জেলাগুলো হচ্ছে-কুমিল্লা, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। বন্যায় আক্রান্ত হয় অর্ধকোটির বেশি মানুষ। ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে বন্যার পানি এখন নেমে যাচ্ছে। ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে এখনো বন্যার পানি রয়েছে, নামছে ধীরগতিতে।


৩ সেপ্টেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যাকবলিত জেলাগুলো থেকে এ পর্যন্ত ৭১ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৫ পুরুষ, ৭ নারী ও ১৯টি শিশু। বন্যাদুর্গত এলাকায় এদের বেশিরভাগ মারা গেছেন পানিতে ডুবে, সাপের কামড়ে ও বন্যাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ এখনো কিছু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কয়েক লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে না গেলে তাদের দুর্দশা ঘুচবে না। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৩ হাজার ৬১৫ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এগুলোতে ৩ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়।



বিপুল ক্ষয়ক্ষতি


গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু বসতভিটায় ফিরে কেউই নিজের ঘর অক্ষত পাননি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বলছেন, এমন ভয়াবহ বন্যা তারা আর দেখেননি। বাড়িঘরের ক্ষতি ছাড়াও কৃষির ক্ষতি বিপুল। মাঠের ফসল নষ্ট হয়েছে, পুকুর প্লাবিত হওয়ায় মাছের খামার ভেসে গেছে, হাঁস-মুরগির খামারের ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক।


এটা ঠিক, দেশের পূর্বাঞ্চলে এবার যে বন্যা হলো, উপদ্রুত এলাকার মানুষের জন্য সেটা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এর চেয়ে ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার অভিজ্ঞতা দেশবাসীর আছে। প্রবীণ মানুষের এখনো মনে আছে ১৯৫৪ ও ৫৫ সালে পরপর ২ বছরের বন্যার কথা। এ দুই বন্যা ঢাকা শহরসহ সারা দেশ প্লাবিত করেছিল। ১৯৭৪ সালের বন্যাও দীর্ঘস্থায়ী ছিল এবং কৃষির ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। সে কারণে ওই বছর দেশে খাদ্যাভাব হয়। ১৯৮৮ সালের বন্যার কথা সবার মনে আছে। রাজধানী ঢাকার প্রায় পুরো এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। বঙ্গভবন ও গুলশান-বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার সবকটি দূতাবাসে বন্যার পানি ঢুকেছিল।


উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষ তাদের অভিজ্ঞতায় এবার সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিলেন, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। তবে এ ক্ষতি আরও অনেক বেশি হতো, যদি বন্যা হতো দীর্ঘস্থায়ী। ২ সপ্তাহের মধ্যেই পানি নেমে গেছে বা নামতে শুরু করেছে। বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষকে এখন শক্তি ও সাহস নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এজন্য অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেটাই এখন জরুরি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও