মানুষ কি শুধু দল পরিবর্তনে খুশি হবে
৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে? নাকি বেনামে জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির আসন পোক্ত হবে? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারই বা কত দিন ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগিয়ে নেবে?
হাসিনা সরকারের বিদায়ের এক মাস যেতে না যেতেই উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার ফোলা বেলুন যে কিছুটা হলেও চুপসে গেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের জনমনস্তত্ত্ব অস্থিরতায় ঠাসা। আমরা বিজয় অর্জন করি, কিন্তু অর্জিত বিজয় ধরে রাখতে পারি না। ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাঘডাশে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিজয়ের সুফল কার ঘরে উঠবে, তা নিয়ে রীতিমতো কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, সেই সরকারের এমন লজ্জাজনক পতনের বিষয়টি সম্ভবত আওয়ামী লীগের চরম বিরোধীরাও ভাবেনি, আওয়ামী লীগ দরদিরা তো নয়ই।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে না গেলে তাঁর কী পরিণতি হতো, তা নিয়ে অনুমাননির্ভর আলোচনা না করে তিনি দেশ ছাড়ায় তাঁর দল ও দলের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকের অবস্থা কী দাঁড়াল, সে বিষয়েই কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে সংকটে পড়েছে। দলের অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন। দলে বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছিল। তখন এমনও বলা হতো যে আওয়ামী লীগ আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, ক্ষমতায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু এসব অনুমান কিংবা ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতায় গিয়েছে এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক দল হওয়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাংলাদেশের রাজনীতি
- গণঅভ্যুত্থান