বিনিয়োগ বাড়লেই নিয়োগ বাড়বে

www.ajkerpatrika.com বিরূপাক্ষ পাল প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছুঁই ছুঁই করছিল। কিন্তু কোভিড-উত্তর অর্থনীতি মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এক অনভিপ্রেত সংকটের মধ্যে পতিত হয়, যার পেছনে কোভিড বা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ—এর কোনোটিই দায়ী নয়। বিগত সরকারের নেতা বা কর্মীরা সে রকম যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করলেও অর্থনীতিবিদেরা তা গ্রহণ করেননি। কারণ, কোভিডের আগে থেকেই বাংলাদেশে দুটো সমস্যা দানা বাঁধছিল। এগুলো হলো: এক. ব্যাংকিক খাতের বর্ধমান খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি এবং দুই. ত্রুটিপূর্ণ বিনিময় হার বা কৃত্রিমভাবে ডলারের নিম্নমূল্য চালিয়ে রাখা। আন্তর্জাতিক লেনদেনে আজকের ডলার-সংকট ও রিজার্ভ ঘাটতি এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারল্যসংকট—এই দুই সমস্যারই বীজ বপন করা হয়েছিল কোভিড-পূর্ব সময়ে।


কোভিড সারা বিশ্বে মন্দা নামিয়ে দেয়। মন্দার একটি সুবিধা হচ্ছে, এ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিস্তেজ হয়ে আসে। কোভিড কমে যেতে থাকলে ২০২১ সাল থেকে আকস্মিকভাবে দীর্ঘ সময়ে চাপিয়ে রাখা চাহিদা সব দেশেই মাথাচাড়া দেয়। কিন্তু সেভাবে জোগানযন্ত্র প্রস্তুত ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদার উচ্চ চাপে জোগানের শিকল ছিঁড়ে যায়। একে বিপণনশাস্ত্রের ভাষায় জোগান শিকলের বিভ্রাট বা ‘সাপ্লাই চেইন ডিজরাপশন’ বলে। এ সময় চাহিদার তুলনায় জোগান ক্ষমতার পশ্চাৎপদতায় একধরনের মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, কলকারখানা ও অফিস-আদালত দ্রুত হারে জেগে ওঠে। সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত শ্রমচাহিদার, যা মজুরি বাড়িয়ে দিয়ে খরচতাড়িত মূল্যস্ফীতি বা ‘কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন’ সৃষ্টি করে।


চলমান এই দুই ধরনের মূল্যস্ফীতি যেকোনো অর্থনৈতিক নবজাগরণের সঙ্গী—যা অর্থনীতির জন্য ততটা অকল্যাণকর নয়। কারণ, এ সময়ে মানুষের কাজের নানা ক্ষেত্র তৈরি হয়, বেকারত্ব কমে, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং মজুরিও বাড়ে—যা বর্ধিত মূল্যস্ফীতিকে ছাপিয়ে যায়। তা ছাড়া জোগান বিঘ্নিত হওয়ায় যেটুকু মূল্যস্ফীতি জেগে ওঠে, তা আবার জোগান-কর্ম স্বাভাবিক হয়ে এলে ঝিমিয়ে পড়ে। তবে মজুরি বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি বেশ কিছুদিন বাজারে থেকেই যায়। সেটি স্বাভাবিক।



বিশ্বাঙ্গনে উদীয়মান অর্থনীতির চাকায় হঠাৎ করে কম্বল পেঁচিয়ে দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেন আক্রমণ করে বসলেন ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে। এতে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে গেল। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেল ও পণ্যের জোগানে আরও বিঘ্ন সৃষ্টি হলো। মূল্যস্ফীতি বাড়তে লাগল মূলত জোগান-বিভ্রাট থেকে। এর সঙ্গে ভীতি থেকেও বেড়ে গেল প্রত্যাশাজনিত মূল্যস্ফীতি। সারা বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে সুদহার বাড়াতে থাকে। ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশে বড়লোক ঋণগ্রহীতাকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ‘বিনিয়োগ বাড়বে’ এমন অছিলায় সুদহারে ৯ শতাংশের টুপি পরিয়ে রাখা হয়। আমানতের ওপর দেওয়া হলো ৬ শতাংশের ছাদ। এই নয়-ছয় সুদহারের কাহিনি কোভিডের সময় শুরু হলেও কোভিড-উত্তর এটিই ছিল সবচেয়ে অসংগত সরকারি নীতি।


২০২২ সালে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এমন সময়ে ৯ শতাংশের সুদহার বজায় রাখা মানে ধনিক গোষ্ঠী শতকরা শূন্য প্রকৃত সুদে ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকার ঋণ বের করে নিয়েছে। দৃশ্যমান সুদহার থেকে মূল্যস্ফীতি বিয়োগ করলে প্রকৃত সুদহার পাওয়া যায়। এই ঋণপ্রাপক সম্প্রদায় বাজারে তারল্য বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত উন্নয়ন প্রকল্পে জর্জরিত উচ্চাভিলাষী বাজেটে রাজস্ব সক্ষমতা দুর্বলতর হতে থাকে। ধনিক গোষ্ঠী কর দিতে পছন্দ করে না। এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য সরকার উচ্চ ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রচুর অর্থ তুলে নেয়—যা বিশেষত খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে আরও অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করে। বাংলাদেশের বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাজার অর্থনীতির বাস্তবতাবিমুখ সেই নয়-ছয় সুদটুপির শাস্তিমাত্র। তদপুরি বিগত সরকারের রাজস্ব অক্ষমতা রাজস্ব নীতির সংকোচনমূলক হাতিয়ারকেও নষ্ট করে দিয়েছে। এটি মূল্যস্ফীতিকে আরও চাঙা করেছে। এখানে মূল্যস্ফীতির প্রায় সবটাই সুদনীতির ভুল, ধনিকতুষ্টি ও রাজস্ব অক্ষমতা থেকে উৎসারিত। কোভিড বা পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের মতো অজুহাত শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টামাত্র।


সুদহার বাড়ানো হয়নি বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রকৃত সুদহার বিদেশিদের কাছে অনাকর্ষণীয় হয়ে পড়ায় এক ধাক্কায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন বিনিয়োগ লেনদেনের ভারসাম্যের আর্থিক হিসাবকে অনেকটা শূন্য করে বাইরে চলে গেছে। সেই থেকে ২০২২-২৩ কালপর্বে অভূতপূর্ব রিজার্ভ-সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১০ দশকের মধ্যভাগে এবং এমনকি শেষ ভাগেও উচ্চ রিজার্ভ যেখানে বাংলাদেশের জন্য ছিল এক পরম স্বস্তির আসন, তা অল্প দিনের মধ্যেই এক দুশ্চিন্তার বিষয়ে পরিণত হলো। শক্তির অবয়ব বছর তিনেকের মধ্যেই সংকটের বিষণ্ন বদনে পরিণত হলো—যার সবটাই ছিল নীতিপ্রণেতাদের অদক্ষতা ও অবোধগম্যতার ফসল। নীতিকর্তারা বিশেষ করে এই সময়ের অর্থমন্ত্রী ও গভর্নররা যে সমস্যাগুলো বুঝতেন না, তা নয়। বুঝতেন যে সুদহার বাড়ালে বড় ঋণগ্রহীতা অসন্তুষ্ট হন কিংবা খেলাপি ঋণের জন্য চাপ দিলে ধনিক গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রভাব খাটায়। গলদ সেখানে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও