ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে কেন সমাধান সম্ভব নয়, নিজেরা বাঁধ দিলে কী হবে?

প্রথম আলো মো. সিরাজুল ইসলাম প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১৬:৪৭

ভাটির দেশ হিসেবে ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় বাংলাদেশে বারবার বন্যা হচ্ছে। হিমালয়ের ধার বেয়ে পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা অববাহিকার বিপুল আয়তনের পানি শেষমেশ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এই তিন নদীর মিলিত প্রবাহ যখন মেঘনা হয়ে সমুদ্রে নামে, এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম, প্রথম আমাজন।


মূলত বাংলাদেশের তিন দিক থেকেই পানি দেশের ভেতরে আসছে। উত্তরে হিমালয়ের বিশাল অববাহিকা, আবার পূর্বেও ভারত ও মিয়ানমারের পাহাড়ি ঢাল বেয়ে পানি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এবারকার বন্যার পানি এসেছে পূর্ব দিক থেকে। তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টির ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। ‘ক্লাউড ব্লাস্ট’ বা অল্প সময়ে তীব্র বৃষ্টি তেমনই একটি নতুন প্রভাব।

আসলে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর প্রায় অধিকাংশই ভারতে উৎপন্ন। ভারতের সঙ্গে এ ধরনের অভিন্ন নদী আছে প্রায় ৫৪টি। মিয়ানমারের সঙ্গে বাকি কয়েকটি। যেমন লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলী আর সীমান্ত ঘেঁষে নাফ নদী। শুধু একটি বড় নদ ‘সাঙ্গু’কে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের ভেতর থেকে উৎপন্ন হয়ে সাগরে পড়েছে। এর ফলে দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত পানির প্রায় ৯২ শতাংশ আসলে দেশের বাইরের বৃষ্টি থেকে উৎপন্ন, কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে থাকে। প্রায় প্রতিটি নদীর ওপর অজস্র বাঁধ দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে আরও বেকায়দায় ফেলে রেখেছে। এর ফলে বর্ষায় শুধু বন্যা নয়, একই সঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে খরা ও লবণাক্ততার সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে দেশের একটা বড় অংশ।


এখন বাংলাদেশ অংশে বাঁধ তথা পানি অবকাঠামো নির্মাণ করে এর পাল্টাজবাব দেওয়া সম্ভব কি না? আজকাল এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এটি বেশ জটিল প্রশ্ন! তবে তার আগে একটু আলোচনা করা যাক যে সমঝোতার মাধ্যমে, তথা দ্বিপক্ষীয় পানি চুক্তি কিংবা আইনের আশ্রয়ের দ্বারা এ সমস্যার সমাধান সম্ভব কি না?



চুক্তি বা আইন দ্বারা কি সমস্যা সমাধান সম্ভব


ঠিক এ মুহূর্তে জাতিসংঘের অধীন যে আইন আন্তর্জাতিক নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে সরাসরি জড়িত, তা হচ্ছে ‘দ্য কনভেনশন অন দ্য ল অব নন-নেভিগেশনাল ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকোর্স’, ১৯৯৭। ২১ মে ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘে আইনটি প্রাথমিকভাবে উত্থাপিত হলে ১০৩টি দেশ এর পক্ষে সায় দেয়, ৩টি দেশ বিপক্ষে এবং ভারতসহ ২৭টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়মানুযায়ী জাতিসংঘ আইনটিকে প্রয়োজনীয় মনে করে এই শর্ত আরোপ করে যে অন্তত ৩৫টি দেশ নীতিগতভাবে অনুমোদন বা ‘রেটিফিকেশন’ করে স্বাক্ষর করলে এটি একটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হবে। ১৭ আগস্ট ২০১৪-এ পর্যাপ্তসংখ্যক দেশ প্রস্তাবনাটিতে স্বাক্ষর করায় তা আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়।


৩০ এপ্রিল ২০১২ সালে আমি প্রথম আলোয় ‘আন্তর্জাতিক পানি আইন-বাংলাদেশ নীতিগত অনুমোদন দিচ্ছে না কেন?’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলাম। তখন পর্যন্ত ২৪টি দেশ এটিতে স্বাক্ষর করেছিল, কিন্তু বাংলাদেশ করেনি। এটি ছিল আশ্চর্যজনক। কেননা বাংলাদেশের জন্য এই আইন ছিল আর যেকোনো রাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মজার কথা হচ্ছে, ২০০১ থেকে ২০০৬—বিএনপি সরকারের আমলেও তারা তা করেনি। কারণ ছিল ভারতকে অখুশি না করা। আর তা হলে এটা বলাই বাহুল্য যে পরের আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে আইনটি স্বাক্ষর করার মতো মেরুদণ্ড থাকার কোনোই কারণ নেই। বাস্তবে তা-ই হয়েছে—বাংলাদেশ এখনো আইনটিতে স্বাক্ষর করেনি।


আবার ভারত যেহেতু এই আইনে স্বাক্ষর কখনোই করবে না, এটি মানা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তারপরও বাংলাদেশ এই আইনে স্বাক্ষর করে থাকলে সে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে অন্তত আরজি পেশ করতে পারত।


তবে এটি ছাড়াও ডজনখানেক আইন আছে, যা পরোক্ষভাবে পানিবণ্টন বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন এক দেশ আরেক দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে, এমন কোনো স্থাপনা তৈরি করতে পারবে না ইত্যাদি। এর কয়েকটিতে বাংলাদেশ ও ভারত—উভয়েই স্বাক্ষর করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া সম্ভব।


দ্বিপক্ষীয় তথা অববাহিকাসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে চুক্তি বা সমঝোতা, যেমন যৌথ নদী কমিশন কতটা কাজ করছে? সারা বিশ্বে ১৯৯৭ সালের নদী আইন বলবৎ হওয়ার আগেও অনেক দেশ এ ধরনের কমিশন গঠন করে পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান করেছে। এ ধরনের দুটি ভালো উদাহরণ হচ্ছে মেকং ও নাইল রিভার কমিশন। এই কমিশনগুলোতে একাধিক দেশ জড়িত। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনে যদি আরও দেশ তথা চীন, নেপাল ও ভুটানকে সঙ্গে রাখা যেত, তাহলে সম্ভবত এটি ভালো কাজ করত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও