প্রিয় আইএনজিও, বন্যাদুর্গত এলাকা আপনাদের মিস করছে

সমকাল গওহার নঈম ওয়ারা প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৪

সত্তরের গোর্কিতে প্রাণহানি দেখে ইয়াহিয়া জান্তার দিল কাঁপেনি। কিন্তু অবিভক্ত ভারতের শেষ বড়লাট লর্ড মাউন্টব্যাটেনের মন খারাপ হয়েছিল। তিনি তাঁর এক নাতিকে পাঠিয়েছিলেন ঢাকায়। তখন ঢাকার গভর্নর সাহেবজাদা ইয়াকুব খান। ব্রিটিশ আর্মির চৌকস এই অফিসার দেশভাগের আগে ছিলেন বড়লাটের এডিসি। সাহেবজাদা ইয়াকুব খান তাঁর পুরাতন বসের চিঠি ও নাতিকে সাদরে গ্রহণ এবং বাংলার মাটিতে বিদেশি মানবিক সংস্থার কাজ শুরুর ব্যবস্থা করেন।


‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বর্তমান বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৭১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভোলাবাসীর পাশে থেকে কাজ করে। দখলদার সামরিক সরকার বিদেশিদের বের করে দিলে সংগঠনটি ভারতে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে কাজ করতে থাকে।  


ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ ছাত্র অবস্থায় বিজ্ঞাপন দেখে ১০ পাউন্ড চাঁদা পাঠিয়েছিলেন মানবিক সংস্থা অক্সফামকে। এক সময় ভুলেই গিয়েছিলেন সে কথা। মনে পড়ে বছরের শেষে যখন তারা তাদের একটা রিপোর্ট পাঠায় তাঁর কাছে। ১০ পাউন্ডের এই স্বীকৃতি, এই জবাবদিহি তাঁকে নাড়া দিয়েছিল; উদ্বুদ্ধ করেছিল ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ায়। সুযোগ আসে স্বাধীনতার পর; এবার অক্সফাম তাঁকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে। ব্র্যাক এখন অক্সফামের চাইতেও বড় প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এনজিও। অক্সফামের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে ভারতের সবচেয়ে বড় সমবায়ী দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আমুল। আমুলও এখন বিশ্বসেরা। 



একাত্তরে শরণার্থী শিবিরগুলোতে চমৎকার কাজ করার পর দেশ শত্রুমুক্ত হলে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেন। পরে একে একে এ দেশে অফিস খোলে নানা দেশের মানবিক সংস্থা। বিভিন্ন দুর্যোগে কখনও নিজে কখনও স্থানীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে তারা সাড়া দিয়েছে, কাজ করেছে। গড়ে তুলেছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। 


বিভিন্ন বিদেশি উন্নয়ন ও মানবিক সহায়ক সংস্থাকে এক ডাকে ‘আইএনজিও’ বলা হয়। বাংলাদেশে এখন কম-বেশি ৯১টি বিদেশি সংস্থার সরকারি অনুমোদন আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন এনজিও ব্যুরো এসব সংস্থা নিবন্ধন ও তাদের প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে থাকে। 


পূর্বাঞ্চলের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সেই আইএনজিও বা আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোকে এখনও দেখা যাচ্ছে না। এ ঘটনা অভূতপূর্ব। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, এসব সংস্থার প্রধান অনেকেই গণআন্দোলনের তাপ আঁচ করতে পেরে জুলাই মাসেই দেশ ছেড়েছেন। এখনও ফেরেননি। অফিস করছেন করোনাকালে তৈরি ‘অফিস ফ্রম হোম’ ঘোড়ায় চড়ে। 


বাংলাদেশে অনেক দিন থেকে কাজ করছে এমন এক ‘আইএনজিও’ কর্মীকে প্রশ্ন করেছিলাম, তারা এখন কী করছেন? উত্তর দিলেন, ‘লুডু খেলছি!’ উত্তর শুনে মনে হয়েছিল রহস্য করছেন; অন্য কিছু বোঝাতে তিনি লুডুর আশ্রয় নিচ্ছেন। যেমন কিছু না করলে বা গুরুত্বহীন কোনো কাজে মগ্ন থাকলে আমরা বলি, ‘ভেরেন্ডা ভাজছি।’ পাশ থেকে আরেকজন হাসতে হাসতে বললেন, ‘নো জোক, আমরা যোগ ব্যায়াম করছি।’ বলা বাহুল্য, বিদেশি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ওই দু’জন কৌতুক বা হেঁয়ালি করে কিছু বলেননি। দেশের কথিত ‘অরাজক’ পরিস্থিতিতে এসব সংস্থার কর্মীরা আসলে কী করবেন?


 


গণআন্দোলন চলাকালে মাঝপথে নির্বিচারে গুলি চলছিল। শিশুরা নিজ বাড়ির ছাদে, আঙিনায় খেলতে গিয়ে হতাহত হচ্ছিল। শিশুদের কোমরে রশি দিয়ে জেলে ভরা হচ্ছিল। এসব দৃশ্য দেখে এমনকি স্বঘোষিত ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বিচারকরা ‘বাড়াবাড়ি’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করছিলেন। তখনও এসব বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তিরা শিশুদের পক্ষে একটি বিবৃতিতেও স্বাক্ষর করার সময় পাননি। মাত্র জনাকুড়ি স্বতন্ত্র ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন সেই বিবৃতিতে।


আইএনজিগুলোকে বলি, এখন কাজের সময়, বন্যায় সাড়া দেওয়ার সময়। এ দেশে কাজ করার ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে মানুষ ভুল বুঝবে আপনাদের। পূর্বাঞ্চলের মানুষ বন্যার সঙ্গে পরিচিত নন; কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয়, সে বিষয়ে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে ফেনী ও নোয়াখালীর মানুষকে উদ্ধার করাই বড় কাজ ছিল। এখন দীর্ঘদিন ত্রাণ লাগবে তাদের। সেটা বিতরণে সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি। সবাই যার যার জায়গা থেকে সহায়তা করবে; কিন্তু সেটা বিতরণের ব্যাপারে যদি রূপরেখা না থাকে তাহলে দেখা যাবে এক অঞ্চলের মানুষ বেশি সাহায্য পাবে; কোনো কোনো জায়গার মানুষ বঞ্চিতই রয়ে যাবে।


সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এখনও ঘোরের মধ্যে। দুর্যোগ সংক্রান্ত ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডার’ দাঁড়িয়েই আছে; হাঁটা-চলা ভুলে গেছে। মাঠ থেকে সমন্বয়ের কান্না ভেসে আসছে। 


একজন লিখে জানিয়েছেন, ‘বন্যার ষষ্ঠ দিনেও ত্রাণকার্যে সমন্বয়হীনতা নতুন বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নয়। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে খাদ্য সহায়তার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, সাপে কাটার চিকিৎসাসহ অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প; সার, বীজের জোগান; ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, অবকাঠামো মেরামতে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সহায়তার উদ্যোগ এখনই নেওয়া জরুরি।’ 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও