পেন্ডুলামের দোলাচলমুক্ত হোক দেশ

www.ajkerpatrika.com অরুণ কর্মকার প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫১

শুরুতেই বলে রাখি, ‘পল্টিবদল’ বর্তমান প্রজন্ম জেন-জি প্রবর্তিত ও ব্যবহৃত একটি শব্দ। অর্থ অনেকটা খেলাধুলায় দলবদল কিংবা জার্সি বদলের মতো। এ রকম আরও কিছু শব্দ ও বাক্য তাঁরা ব্যবহার করেন, যেগুলো আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধ করা ও দেখা প্রজন্মের কাছে অপরিচিত এবং কিম্ভূত ঠেকতে পারে।


আবার পেন্ডুলামের মতো দোলাচলের ব্যাপারটাও জেন-জির কাছে পরিচিত না-ও হতে পারে। কেননা, বাড়িঘরে পেন্ডুলামওয়ালা দেয়ালঘড়ি কিংবা ‘গ্র্যান্ডফাদার ক্লক’ তাঁদের অনেকেই হয়তো প্রত্যক্ষ না-ও করে থাকতে পারেন। তাই দুই প্রজন্মের কাছেই বিষয়টি স্পষ্ট থাকা ভালো।


এই ‘পল্টিবদল’ কিংবা পেন্ডুলামের মতো অবিরত দোলাচলই বোধ হয় বাংলাদেশ নামক আমাদের রাষ্ট্রটির ভাগ্যের লিখন। না হলে যতবার এই রাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তা সে হত্যা, সামরিক কিংবা গণ-অভ্যুত্থান, গ্রহণযোগ্য কিংবা অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যেভাবেই হোক না কেন, ততবারই এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এবং পথ চলার ইতিহাসের একটি খণ্ডিত অংশ পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে।



বলা ভালো, পাদপ্রদীপের আলোয় আনা হয়েছে। একইভাবে প্রাণপণ চেষ্টা করা হয়েছে ইতিহাসের অপর অংশকে মুছে ফেলার। প্রতিবারই যাঁদের তত্ত্বাবধানে এটা করা হয়েছে, তাঁদের কাছে পূর্ণ সত্যটা যে অজানা ছিল তা নয়। কিন্তু কখনো সেই পূর্ণ সত্য প্রতিষ্ঠার পথে কেউ হাঁটেননি।


এই যে হাঁটেননি, তার প্রধান কারণ রাজনীতি। দলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট বিভাজন। মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই দেশের রাজনীতিতে এই ধারার প্রবর্তন হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই বিভাজনের ধারা রেললাইনের মতো সমান্তরালভাবে চলতে থাকে। এরপর প্রতিবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিভাজনের মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। এরপর রাজনীতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ ক্রমে নৃশংসতার পর্যায়ে পৌঁছেছে।


আর বিভাজনের প্রকৃতিও পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে দেশের রাজনীতি ও সমাজ অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠতে পারেনি। কোনো দল কিংবা রাজনৈতিক আদর্শই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে গণ-অসন্তোষ।এই অসন্তোষেরই একটা চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে আমরা দেখলাম সাস্প্রতিক (জুলাই-আগস্টের) ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান।



দৃশ্যত এই অভ্যুত্থানের যাঁরা সংগঠক এবং যাঁদের ব্যাপক অংশগ্রহণে এই অভ্যুত্থান সফল হয়েছে, সেই জেন-জির দাবিদাওয়া, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে দেশবাসী যে ধারণা পেয়েছিল, তা ছিল ব্যতিক্রমী ও আশাবাদী হওয়ার মতো। সেই আশাবাদ বিভাজনমুক্ত জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠার। যে অভিলাষ তাঁরা প্রকাশ করেছিলেন তা ছিল কোনো খণ্ডিত ইতিহাস নয়, পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় ইতিহাস ও জাতীয় আকাঙ্ক্ষার আলোকে দেশের পুনর্গঠন ও রাষ্ট্রের সংস্কার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আদর্শের সুপ্ত সমর্থক হলেও দেশের যে বিপুল জনগোষ্ঠী জাতীয় জীবনে ও রাষ্ট্রীয় আচারে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের প্রবর্তন চায়, তাঁরা জেন-জির প্রতি একপ্রকার নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছিলেন।


আমার জানামতে, এখনো জেন-জির প্রতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর গত কয়েক দিনের কিছু কিছু ঘটনা, কোনো কোনো উপদেষ্টার কিছু কিছু উক্তি ওই সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে এই সংশয় সৃষ্টি করেছে যে জেন-জির অভিলাষ আদৌ বাস্তবে রূপায়িত হবে তো? হলে কীভাবে হবে? নাকি সবকিছু পল্টিবদল কিংবা পেন্ডুলামের অবিরত দোলাচলের গহ্বরে নিমজ্জিত হবে।


শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশান্তরী হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন চূড়ান্ত হওয়ার পর গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি ভবন এবং অবকাঠামোতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাবলি জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই সবাই দেখেন। কিন্তু ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে স্থাপিত জাদুঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটকে কেউ সেই কাতারে ফেলবেন না; বিশেষ করে আমি দলকানা ব্যতীত যে বিপুল জনগোষ্ঠীর কথা বলছি, তাঁরা তো নয়ই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও