কারসাজি ও জালিয়াতির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় লাখো কোটি টাকা

বণিক বার্তা প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর দেড় বছরে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে। অস্বাভাবিক এ উল্লম্ফনের পর হঠাৎ ধস নামে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে। লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ বছর সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। তার উত্তরসূরি হিসেবে ২০২০ সালে দায়িত্বে আসেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। যদিও আলোচিত এ দুই চেয়ারম্যানের বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও স্বজনপ্রীতির কারণে দেশের পুঁজিবাজার আরো খাদের কিনারে চলে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


দেশের পুঁজিবাজার থেকে জাল-জালিয়াতি, কারসাজি, প্লেসমেন্ট শেয়ার ও প্রতারণার মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ১ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অনেক কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেও নিজেদের ব্যবসায়িক ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারেনি। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে আইপিওর অর্থ ভিন্ন খাতে ব্যয়ের ঘটনাও দেখা গেছে। এছাড়া আইপিওতে আসার পর কৃত্রিমভাবে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে এর মাধ্যমেও পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায়ও বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টাকা ছাড়াই উপহার হিসেবে প্লেসমেন্ট শেয়ার দেয়া হয়েছে। এসব শেয়ার কোম্পানির তালিকাভুক্তির পর বাড়তি দামে বিক্রি করেছেন তারা। আইপিও-সংক্রান্ত এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে। 


বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির একীভূতকরণ, সুকুক ও বন্ড ইস্যু এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গত ১৫ বছরে সুবিধাভোগী অনেক শেয়ার ব্যবসায়ী ও কোম্পানির উদ্যোক্তা পুঁজিবাজার কারসাজির মাধ্যমে বাজার থেকে বড় অংকের অর্থ হাতিয়েছেন। টাকার অংকে এর পরিমাণ ৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।



২০১১ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য, আইপিওর প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, অমনিবাস হিসাবের আড়ালে সন্দেহজনক লেনদেন, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ব্রোকার ও মার্কেট প্লেয়ারদের ভূমিকার বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ২০০৯ ও ২০১০ সালে যেসব কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে উল্লম্ফন হয়েছিল সেগুলোর একটি তালিকা দেয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ২০০৯ সালে বিচ হ্যাচারির শেয়ারদর ৮২৯ শতাংশ, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর ৫৬৭, আফতার অটোমোবাইলসের শেয়ারদর ৪৭৮, পদ্মা সিমেন্টের শেয়ারদর ৪৬৬, রহিম টেক্সটাইলের শেয়ারদর ৩৪২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। একইভাবে এর পরের বছর ২০১০ সালে সিটি ভেজিটেবলসের দর ৪ হাজার ১৫৮ শতাংশ, সাফকো স্পিনিংয়ের ৭৯২, তাল্লু স্পিনিংয়ের ৪৪৪, রহিমা ফুডের ৩২০ ও বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছিল ২৯৯ শতাংশ পর্যন্ত।


ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদনে ১৯৯৬ সালের পুঁজিবাজার ধসের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনটি আমলে না নেয়ার বিষয় উল্লেখ করে সরকারের প্রতি বেশকিছু সতর্কতা ও সুপারিশ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে বলা হয়, ‘১৯৯৬ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে সন্দেহের তালিকায় ছিলেন ইমতিয়াজ হোসেন, খোরশেদ আলম, সালমান এফ রহমান, এনায়েতুর রহিম, রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভি প্রমুখ। বর্তমান তদন্তে তাদের মধ্যে সালমান এফ রহমান ও রকিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক মতামত এসেছে এবং কিছু তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে। এসইসিকে প্রভাবিত করতে দুজনেই সক্রিয় ছিলেন বলে অনেকের ধারণা। এসইসির চেয়ারম্যানের নিয়োগ ও সদস্য মনসুর আলমের পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে সালমান এফ রহমান ও রকিবুর রহমানের জোরালো তদবির ও সমর্থন ছিল বলে অনেকের বিশ্বাস। বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের অস্বচ্ছ কেসটির তদবিরে সালমান এফ রহমান নিজেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ধরনা দিয়েছেন। জিএমজি, ইউনিক হোটেল প্রভৃতি কেসে সালমান এফ রহমান সম্পৃক্ত রয়েছেন। কেসগুলো অস্বচ্ছ। এসইসি পরিচালনায় দুজনেরই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ছিল। এ কারণে সাধারণের মধ্যে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’ 


তদন্ত প্রতিবেদনের এ সতর্কতা ও সুপারিশ পরবর্তী সময়ে সরকার কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেভাবে ভ্রুক্ষেপ করেনি। কেননা ২০১১-পরবর্তী সময়েও দেশের পুঁজিবাজারে এ দুজনের প্রভাব অব্যাহত ছিল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও