পাবলিকের ভয় কি ভেঙে গেল
মানুষ ভূতকে ভয় পায়। কারণ, ভূতকে সে দেখেনি। সে শুনেছে, ভূত বলে বিরাট মারাত্মক কিছু একটা আছে। ভূত বলে সত্যিই যদি কিছু থাকত আর তারা যদি দিনদুপুরে বিটকেলে চেহারা নিয়ে হাটবাজারে হাঁটাচলা করে বেড়াত; সবার সামনে দু-চারটে লোকের ঘাড় মটকাত, তাহলে আর লোকের মনে অতটা ভয় থাকত না।
ভয় কেটে যেত। লোকে তখন নিজেদের ঘাড় বাঁচানোর জন্য এক হয়ে ভূতের ঘাড় মটকানোর কায়দা খুঁজে বের করত।
পিস্তল-বন্দুক আর ক্ষমতা হলো ভূতের মতো জিনিস। এগুলো আড়ালে রাখতে হয়। পাবলিককে আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে হয়, ‘সাবধান! পিস্তল কিন্তু আছে!’
অমুক লোক অনেক ক্ষমতাধর এবং তার কোমরে সব সময় পিস্তল থাকে, এটি যদি সাধারণ লোক জানে বা অনুমান করতে পারে, তাহলে তারা সেই লোককে ভয় পায়। যদি দেখে, সেই লোক কোমরে লুকানো পিস্তল বের করে না; অযথা হম্বিতম্বি করে ক্ষমতা জাহির করে না; তাহলে তাদের কাছে তার পিস্তল আর ক্ষমতা একটা ভীতিকর রহস্য হয়ে থাকে।
ক্ষমতা আর পিস্তলের অহেতুক ব্যবহার না থাকলে ভয়ের সঙ্গে সমীহ, এমনকি শ্রদ্ধাও যোগ হতে পারে।
কিন্তু পিস্তল যদি বাড়াবাড়ি রকমের ক্ষমতার ফুটানিতে ফটাফট গুলি ফুটাতে থাকে, তাহলে আর পাবলিকের ভয় থাকে না। গুলিতে মানুষ মরলে প্রথমে জনতা আকস্মিক আতঙ্কে ভ্যাবাচ্যাকা খায় বটে, কিন্তু খুব শিগগিরই সেই আতঙ্ক কেটে যায়। ভয় চলে যায়। ভয়ের জায়গায় ক্ষোভ আর প্রতিবাদ-প্রতিশোধের স্পৃহা জুড়ে বসে।
ছাত্রদের আন্দোলনে সেই জিনিস দেখা গেল। পুলিশের কোমরের পিস্তল-বন্দুক শুধু হাতে উঠে এল না, সেই পিস্তল-বন্দুক থেকে নির্বিচারে গুলি বের হলো।
নিজের ঘরের বারান্দায় এসে দাঁড়ানো নারী থেকে শুরু করে বাবার কোলে থাকা বাচ্চাকেও সেই গুলি গিলে খেল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়ানো ভিডিও ফুটেজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যেভাবে গুলি করতে দেখা গেছে, যেভাবে দুই হাত প্রসারিত করা আবু সাঈদকে গুলি করতে দেখা গেছে; যেভাবে কিশোর ও যুবা বয়সীর চোখ ছররা গুলিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর পত্র-পত্রিকায় এসেছে, তা নির্বিকার দলান্ধ ছাড়া দেশের সব স্তরের সব মানুষকে হকচকিত, বিস্মিত ও আতঙ্কিত করেছে।