কোনো নাগরিক যেমন আইনের ঊর্ধ্বে নন, তেমনি রাষ্ট্র যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরাও আইনের ঊর্ধ্বে যেতে পারেন না। অথচ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছয় সমন্বয়কের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, সেটি চরমভাবে আইনের লঙ্ঘন। এই ছয় সমন্বয়কের কাউকে পাঁচ দিন, কাউকে তিন দিন ধরে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) দপ্তরে আটকে রাখা হয়েছে।
শিক্ষকেরা তাঁদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে এলেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ডিবির কর্মকর্তারা তাঁদের সঙ্গে ন্যূনতম সৌজন্যও দেখাননি। যে দেশে নাগরিকেরা বিভিন্ন মৌলিক ও মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, সে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অবশ্য সৌজন্যবোধ আশা করা কঠিন।
সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হইতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।’ ডিবি পুলিশ কথিত নিরাপত্তা দেওয়ার নামে এই সমন্বয়কদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে নিয়ে এসেছে। বাকি তিনজনকে বিভিন্ন সময় তাঁদের বাসা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
এই সমন্বয়কেরা আটক, না মুক্ত; সে বিষয়টিও ডিবির পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়নি। বলা হয়েছে, তাঁদের নিরাপত্তার জন্যই ডিবিতে আনা হয়েছে। কিন্তু এই সমন্বয়কদের কেউ ডিবির কাছে নিরাপত্তা চাননি। নাগরিক কোথায় নিরাপদ থাকবেন, সেটা নিশ্চয়ই ডিবি পুলিশ ঠিক করতে পারে না। নাগরিক নিজেই ঠিক করবেন।
এর মাধ্যমে সরকার এই ছয় সমন্বয়কের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির জীবন স্বাধীনতা; দেহ ও সুনাম ও সম্পত্তির হানি ঘটে।’ ডিবিপ্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী তাঁদের যদি গ্রেপ্তারই করা না হয়, তাহলে তঁাদের ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার এখতিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেই। আর গ্রেপ্তার করা হলেও তিন ঘণ্টার মধ্যে স্বজনকে জানানো এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান আছে।