কোটা সংস্কার তো হলো, চাকরির সমাধান কি হবে
দেশের ছাত্রসমাজ তাদের জীবন-মরণ সমস্যা হিসেবে নিয়েছে কোটা সংস্কার। অত্যন্ত যৌক্তিক এই দাবি নিয়ে সরকার যেভাবে ব্যবস্থা নিল এবং তার জন্য যে এত মানুষ অকালে প্রাণ হারাল তার মূল দায় সরকারের ওপরই বর্তায়।
এখন কোটা সংস্কার হলেই কি দেশের মানুষের চাকরি নিশ্চিত হলো? এতটা আস্থা কি রাখা যাবে? দেশে পরিষ্কারভাবে নিশ্চলতা স্ফীতি বা স্ট্যাগফ্লেশন চলছে।
আমাদের মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের হার দুটোই বাড়ছে। যদিও সরকারি উপাত্ত এসব জিনিস দেখায় না। আর যেহেতু অনেকেই বিসিএসের জন্য বিবিএসের দেওয়া উপাত্ত মুখস্থ করে চলছে, তাই বাইরের বাস্তবতায় না আসার আগে অন্য সমস্যাগুলো ছাত্র অবস্থায় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন দেখি কী কী সমস্যার সমাধান দরকার।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সংস্কার
প্রশ্ন ফাঁস : পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের সমস্যা কিছুদিন আগেও সবার মুখে মুখে ছিল। এই প্রশ্ন ফাঁসের ধারা চলে আসছে পিএসসি থেকে সব সরকারি চাকরির পরীক্ষায়ই। মাঝেমধ্যে হুট করে খুব হইচই হলে সেই পরীক্ষা হয়তো বাতিল হয়। কিন্তু যেগুলোতে হইচই হয়নি, সেগুলাতে কি প্রশ্ন ফাঁস হয়নি বলতে পারেন?
এখন পর্যন্ত যত প্রশ্ন ফাঁসের জন্য যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের কি কোনো বিচার হয়েছে? তাও বাদ দিলাম, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর জন্য সরকার কোনো ব্যবস্থা কি নিয়েছে? কোথাও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না, কেউ সংস্কারের কথাও বলে না। যদি এভাবেই প্রশ্ন ফাঁস চলতে থাকে, তাহলে যাঁদের নিয়ে আসা দরকার বলে কর্তৃপক্ষের মনে হবে, কোটা না থাকলেও তাঁদের নিয়ে আসা সম্ভব। বিশেষ একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেক্ষেত্রে কি অগ্রাধিকার পাবে না?
দুর্নীতির অভিযোগ : এই অভিযোগ বাংলাদেশে আদিলগ্ন থেকে চলে আসছে। অনেকেই বিভিন্নভাবে কন্ট্রাক্ট নিয়ে চাকরির নিশ্চয়তা দেন। কতটুকু ভিত্তি আছে, সেটা জানা না থাকলেও অনেকেই টাকা দিয়ে চুক্তি করেন। আবার সর্বগ্রাসী দুর্নীতির দেশে এ অভিযোগ অনেকে বিশ্বাসও করেন।
একসঙ্গে কয়েকজনের আসন পাশাপাশি ফেলে দেখাদেখি করে পরীক্ষা দেওয়ার কথাও শোনা যায়। যে দেশে সব পাবলিক পরীক্ষায় নকল হয়, সেখানে এসব পরীক্ষায় অসাধু সুবিধা নেওয়া হয় কি না, আসলে জানা সম্ভব না।
ভেরিফিকেশন : শুধু মেধা থাকলেই চাকরি পাবেন না। আপনার পাস করতে হবে ‘ভেরিফিকেশন’ নামে আরেকটি পরীক্ষায়, যেটিতে আপনার মেধার কোনো ভূমিকাই নেই। এখানে যাঁরা ভেরিফিকেশন করেন, তাঁদের সন্তুষ্টি অর্জন করা লাগে। আবার বিরোধী পক্ষের রাজনীতির সঙ্গে আপনার যোগাযোগ থাকলে আপনার চাকরি হবে না।
প্রতিবার এভাবে ঝরে যাচ্ছে বেশ কিছু মেধাবী। এটা কি অবিচার না? এই দেশ সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক, এখানে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে পরিবারের কারও যোগাযোগ থাকাটা কীভাবে অপরাধ হয়?
সরকারি চাকরিতে এখন খালি পদ আছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ। তাহলে আপনারা আসলে কতগুলো পদের জন্য চেষ্টা করছেন? সারা বছর এর থেকে বেশি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর তো দেশে পাস করে বের হচ্ছে।