সংকটের কয়েকটি দিক ও কিছু প্রশ্ন

www.ajkerpatrika.com মোনায়েম সরকার প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:৫১

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী পরিস্থিতির কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। যেহেতু সরকার দেশ চালায়, সেহেতু আলোচনায় সরকারের অবস্থান নিয়ে কথা হবে বেশি।


লক্ষ করা গেছে, কয়েক বছর ধরে যেকোনো দাবি নিয়ে কেউ সোচ্চার হলে দাবিটি ন্যায্য কি অন্যায্য, তা বিবেচনা না করেই সরকার বিরক্ত হয়। অধিকার আদায়ের জন্য মানুষ যখন বিক্ষোভ করে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে তা বিবেচনার প্রয়োজন আছে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বসে তার একটা যুক্তিযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করা দরকার হয়। কিন্তু এ সময়টায় দেখা গেছে, সরকার যেন সেই সব ব্যাপারে উদাসীন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা গেছে। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর যদি আদালতের দোহাই না দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কেউ, তাহলে হয়তো এত প্রাণ ঝরত না, আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুর-আগুনের মতো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারত না, পরিস্থিতি এতটা অস্বাভাবিক হতো না। আবার কেউ এটাও মনে করেন, সরকার শুরুতে উদ্যোগ নিলেও পরিস্থিতি জটিল করার কোনো না কোনো উসিলা খোঁজা হতোই।


কী হতো তা নিয়ে গবেষণা না করে যা হয়েছে তা নিয়েই কথা বলি। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যে প্রসঙ্গ নিয়ে মাঠে নেমেছিল, সেটা কোনো অযৌক্তিক আন্দোলন ছিল না। কেন কোটার পরিমাণ থাকবে মেধার চেয়ে বেশি, সে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে। যখন আমরা উন্নয়নের কথা বলছি, তখন কি কর্মসংস্থান বেড়েছে? প্রতিবছর পরীক্ষা দিয়ে বের হচ্ছে যারা, তাদের কত শতাংশ বেকার থাকছে, সেই পরিসংখ্যান কি আছে আমাদের হাতে? বেকারত্বের গ্লানি সে-ই বোঝে, যে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। কর্মসংস্থানের সুযোগ না বাড়ায় সরকারি চাকরির নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করাটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু মেধার ভিত্তিতে সেই চাকরির নাগাল পেতে হলে কোটার পাহাড় অতিক্রম করে তারপর সেখানে পৌঁছাতে হবে। ফলে চাকরিক্ষেত্রে এত বিপুল পরিমাণ কোটার বিরোধিতা করা খুবই যৌক্তিক ব্যাপার।


আবার এ প্রশ্নও আছে, কোটা সমস্যার সমাধান হলেই কি সব ‘মেধাবী’র সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ হবে?


এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গ। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর দুষ্কৃতকারীরা এই আন্দোলনে ঢুকে পড়তে পেরেছে সেটাও সরকারের ঔদাসীন্যের কারণেই নয় কি? প্রথম দিকে আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে তারা চুপচাপ বসে ছিল। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যখন কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে, তখন এ রকম আচরণ মোটেই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ নয়; বরং ছাত্রলীগকে লাঠিসোঁটা হাতে আন্দোলন প্রতিরোধের জন্য পাঠিয়ে সংকট আরও গভীর করা হয়েছে। ফল যা ঘটেছে, তা হলো আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং তারই পথ ধরে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। ছাত্রলীগের ডান্ডা যখন আন্দোলনকে ঠান্ডা করতে পারল না, তখন পুলিশ, বিজিবি নামল রাস্তায়। রক্ত ঝরল। তখন যে অস্থির সময়ের জন্ম হলো, তারই সুযোগ নিল দুষ্কৃতকারীরা। তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করল।


এখানে একটি বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। যারা রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, তারা নিছক দুষ্কৃতকারী নয়। এরা সরকারবিরোধী রাজনীতিরই অংশ। সুযোগ বুঝে এরা আন্দোলনের পথ ধরে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে দিয়ে সরকার পরিবর্তনের স্বপ্নও তারা দেখেছে। রাজনৈতিক ঘটনা নিয়মতান্ত্রিক পথে মোকাবিলা না করার যে অভ্যাস আমাদের সৃষ্টি হয়েছে, এটা তারই একটা দৃষ্টান্ত। ফলে সহিংসতার দায় বিরোধীদলীয় রাজনীতিকদের নিতে হবে।


ছাত্রলীগ যখন ডান্ডা মেরে আন্দোলন ঠান্ডা করার জন্য নামল, তখনকার অবস্থাটা কল্পনা করুন। সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘ছাত্রলীগই আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় যথেষ্ট’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে কোনোভাবেই দায়িত্বশীল বলা যায় না। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এত বড় আন্দোলনকে কি সত্যিই মোকাবিলা করতে পারত? ভেবে দেখা যাক, কারা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এরা বিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি নয়। যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো দিন মিটিং-মিছিল করেনি, তারাও কেন এই আন্দোলনে শরিক হয়েছে, সেটা ছাত্রলীগের বোঝা উচিত ছিল। ছাত্রলীগের বোঝা উচিত ছিল, এই আন্দোলন আসলে তাদেরও আন্দোলন। ছাত্রলীগের একটা অংশ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির সঙ্গে যুক্ত হয়তো, কিন্তু ছাত্রলীগের বড় অংশকেই তো পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকতে হবে। সুতরাং তারাও তো এই বিশাল কোটার কারণে ভুক্তভোগী হবে। তাই ঠান্ডা মাথায় বিবেচনা করলে ছাত্রলীগ তো এই আন্দোলনের শরিক পক্ষই হতে পারত। এখন এই ভয়ংকর দিনগুলো পার হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, ছাত্রলীগ সেদিন যে কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, সেটা ছিল নিছক আওয়ামী লীগের অবস্থান থেকে পরিস্থিতি বুঝতে না পারার খেসারত। এখন তো দেখাই যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে 
নিয়েছে সরকার। কিন্তু এ জন্য দুঃখজনকভাবে এত রক্ত ঝরল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও