অনেকতো করলাম উন্নয়ন জাতিগঠন কি করতে পারলাম?
দারিদ্র্যতা হ্রাসকরণ, রাস্তাঘাট, পদ্মা ব্রিজ, মেট্রোরেল, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নের মহাযাত্রায় সবই পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক আত্মিক উন্নয়ন’ প্রসঙ্গটি। জাতিগঠনে এর ভূমিকাই সব থেকে বেশি।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।
উন্নয়নতো অনেক হলো, স্বাধীনতার অর্ধশতক পার করার পর যে প্রশ্নটি উঁকি দিচ্ছে সেটি হলো- জাতিগঠন হলো কতটুকু? দেশজুড়ে এ মুহূর্তে যে অবস্থা চলছে, তাতে এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। সমাজে সুশিক্ষা, ন্যায়নিষ্ঠা, হতদরিদ্র মানুষের জন্য সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন, আর্তমানবতার সেবা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষিত সমাজ গঠন ও সত্য কতটুকু প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি-এসব কথা নিয়ে আজ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ থেকে শুরু করে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, রাজস্বের মতিউর রহমান, একই বিভাগের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুন, সিলেটের কর কমিশনার এনামুল হক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি কামরুল হাসান, পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আবেদ আলী, পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর কিংবা মিন্টন সমাদ্দারদের ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সমাজগঠন তথা জাতিগঠনে এখনও আমরা ঢের পিছিয়ে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে বলেছেন, তাঁর সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। তিনি বলেছেন, ‘যারাই দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্সের’ বক্তব্য অবশ্য নতুন নয়; গত ১৪ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান, ব্যবস্থা ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে।