মোবাইল ফোনে বিরক্তিকর জাঙ্ক কল বন্ধ হোক

www.ajkerpatrika.com শাইখ সিরাজ প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৩

বেশ কয়েক বছর ধরেই মোবাইল ফোন ব্যবহারে নতুন এক বিড়ম্বনা শুরু হয়েছে। ফোন ধরে বিভিন্ন কোম্পানির বিপণনের লোকদের কথা শুনতে হয়। সময়-অসময়ে কল। প্রতিদিন বহু টেক্সট মেসেজ তো আছেই। হঠাৎ হঠাৎ কল।


ব্যাংক থেকে শুরু করে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ইনস্যুরেন্স, হাউজিং বা রিয়েল এস্টেট, প্লট, ফ্ল্যাট, ফিক্সড ডিপোজিট, ক্রেডিট কার্ড, এই কার্ড, সেই কার্ড, হাজারো রকমের সুবিধার প্রলোভনের কল। হয়তো জরুরি কোনো কাজে আছি, বেজে উঠল ফোন। ভদ্রোচিতভাবে সালাম দিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কথা বলে একপর্যায়ে এসে বাণিজ্যিক আলাপটি শুরু করল।


এতে যে কাজটি করছিলাম, তাতে আর মনোযোগ রাখা যায় না। হঠাৎই বিরক্তির উদ্রেক করে। তাদের কথাগুলোর জবাব দেওয়াও কঠিন।এমনকি কথা চালিয়ে যাওয়াও মুশকিল। ফোন কেটে দেওয়ার মতো অভ্যাসও নেই। সব মিলিয়ে এ এক নতুন ধরনের বেকায়দা।


মাঝে মাঝেই বিষয়গুলো নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সকাল থেকে নানা কাজে থাকতে হয়। আজকের যুগে সকালে ফোন খোলার পর নিজের প্রয়োজনেই অসংখ্য কল করতে হয়। আবার প্রয়োজনীয় মানুষের ফোন ধরে কথা বলার বিষয় তো আছেই। কিন্তু এর মধ্যেই যদি এসব বিরক্তিকর ‘কল’ সামলাতে হয়, তাহলে মানুষের মাথা ঠিক থাকবে কীভাবে? আমি জানি না, আমাদের মতো যাঁরা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে আছেন বা সারা দিন মানুষ নিয়ে কারবার করেন, তাঁরা কীভাবে এগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করেন? প্রশ্ন জাগে, তাঁরা এই আকস্মিক ‘কল’ ও অজস্র টেক্সট মেসেজ পান কি না।


খোঁজখবর করে জানলাম, ফোন কোম্পানি থেকে ‘প্লাটিনাম’, ‘স্টার’ বা ‘আইকন’ গ্রাহকদের নাম ও নম্বরের তালিকা নিয়ে কোম্পানিগুলো যথেচ্ছ ব্যবহার করে। আবার যাদের ফোনে বেশি ‘কল’ আসে-যায়, এমন নম্বরকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে পৃথকভাবে বাছাই করার ব্যবস্থাও রয়েছে। সেই নম্বরগুলো বিশেষ নম্বর হিসেবে সরবরাহ করা হয় কল সেন্টার বা বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। এগুলো তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের একটি অংশ। এর জন্য তারা টাকা নিয়ে ‘চটকদার’ কথা বলার মতো ছেলেমেয়ে রেখেছে। তাঁদের একটি নির্দিষ্ট সময় ও কর্মসূচি ঠিক করে দেওয়া আছে, সেই অনুযায়ী তাঁরা দায়িত্ব পালন করেন। মানুষকে বিরক্ত করাই একটি করপোরেট দায়িত্ব (?)—কী এক আজব সময়ে আছি আমরা!


আমি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫টি অবাঞ্ছিত কল এবং ২০ থেকে ২৫টি টেক্সট মেসেজ পাই। জানি ফোন সেটে নম্বর ব্লক করার একটি সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দেখি একেকবার একেকটি নম্বর থেকে কল আসে। চিন্তা করি, আমার ফোন নম্বর আমি কাকে কাকে দিয়েছি। খুব বেশি মানুষের কাছে তো আমার নম্বর নেই। তারপর ভাবি গুরুত্বপূর্ণ কেউ হবেন হয়তো। কিন্তু ফোন ধরেই সেই বিড়ম্বনা।


আমি বরাবরই একটি ফোন ব্যবহার করি। একাধিক ফোন ব্যবহারের উদ্যোগও নিয়েছি। কিন্তু একটি ফোনই সামাল দিয়ে উঠতে পারি না। এখন থেকে বছর ১০-১২ আগে আমি একবার ফোন নম্বরই পাল্টে ফেলেছিলাম নানা রকম অবাঞ্ছিত ফোনকলের অত্যাচারে। এখন আর ফোন নম্বর বদলানোর সুযোগ নেই। জানলাম, ফোন নম্বর বদলিয়েও রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। ফোন কোম্পানিগুলোই এ ধরনের বাণিজ্যিক কারবারিদের সহায়ক।


আমার মতো আরও বহু মানুষের নম্বর এভাবে বিপণনভিত্তিক ‘কল সেন্টার’গুলোয় তারা কীভাবে বা কোন শর্তে সরবরাহ করে, তা আমি জানি না, তবে নিশ্চয়ই এখানে কোনো বাণিজ্যিক লেনদেন রয়েছে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে আমার ফোন নম্বরটি গড়পড়তা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়ার এ কাজটি মোটেও শোভন নয়, এমনকি একধরনের অপরাধ।


যাঁরা এ ধরনের কল করেন, এমন অনেক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। জিজ্ঞাসা করেছি, আপনি জেনেবুঝে আমাকে ফোন করেছেন কি না। তাঁরা বলেন, ‘জি স্যার, আপনার নাম-পরিচয় জেনেই ফোন করেছি।’ তখন আর বলার কিছুই থাকে না। আমার ব্যস্ততার মধ্যে এ ধরনের একটি ‘কল’ অবাঞ্ছিত হিসেবে জানালে তাঁরা বলেন, ‘স্যার, এটি আমাদের জব, কিছু করার নেই। আমাদের কোম্পানি থেকে একটি টার্গেট দেওয়া আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই টার্গেট আমাকে পূরণ করতেই হবে। অনেকেই বিব্রত ও বিরক্ত হন। এটিও আমরা জানি।’ অদ্ভুত এক বিষয়। এ যেন একধরনের জুলুম!


চলমান আধুনিক সময়ে যখন পণ্য বিপণনে ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে মানুষের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করা হয়, কোনোভাবেই কাউকে হয়রানি না করার কথা বলা হয়, তখন জোর করে ফোনে বাক্যবিনিময়ের এ কারবারটি কোন ধরনের শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে, প্রশ্ন জাগে।


কে জানে, আমরা হয়তো একটা সন্ধিক্ষণে আছি। হয়তো পরবর্তী সময়ে এ অবস্থার পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আমাদের মোবাইল ফোন কালচারের দুই দশক পূর্তির পরও আমরা কেন এর ব্যবহারের আদবকেতা আয়ত্তে আনতে পারছি না, সেটাই বিস্ময়ের ব্যাপার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও