রোহিঙ্গারা কোন পক্ষে, জান্তা না আরাকান আর্মি?
অনেকে দাবি করেন, উত্তর রাখাইনে আসলে কী ঘটছে সেটা তাঁরা জানেন। কিন্তু বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি এবং বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিচার করলে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে বেশির ভাগ মানুষই তাঁদের নিজেদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করছেন। ফলে প্রকৃত সত্যের মাঝামাঝি কোথাও তাঁরা অবস্থান করছেন।
গত ২৬ মার্চ ইরাবতীতে প্রকাশিত আমার ‘মিয়ানমারের জান্তা রাখাইন ও রোহিঙ্গা দুই পক্ষকে বোকা বানাতে খেলছে’ শিরোনামের নিবন্ধের শেষ অনুচ্ছেদে আমি লিখেছিলাম, ‘রাখাইন রাজ্যে অস্তিত্ব–সংকটের মুখে মিয়ানমারের জান্তা সরকার মরিয়াভাবে জাতিগত বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে। প্রশ্ন হলো, রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিলমিশটা কতটা গভীর হয়েছে, জান্তার খেলাটা তারা কতটা গভীরভাবে দেখতে পারছে ও জান্তার খেলা তারা কতটা প্রত্যাখ্যান করতে পারছে এবং জান্তার পুতুলে পরিণত হওয়া তারা কতটা ঠেকাতে পারছে?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যদি বিচার করি, তাহলে এটা বলা যায় যে জান্তা তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সফল হয়েছে। চরমপন্থী ও পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি আধিপত্য বিস্তার করছে এবং মধ্যপন্থীদের বক্তব্য ডুবিয়ে দিচ্ছে। এটাই জান্তার উদ্দেশ্য। আর তাদের ৭০ বছরের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে অনেকে গণহত্যাসহ নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ তুলে আরাকান আর্মিকে দায়ী করছেন। কিন্তু জান্তার অপরাধগুলো তাঁরা উল্লেখ করছেন না।
এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে যে এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে অনেকগুলো প্রকৃতপক্ষে সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রোহিঙ্গা অভিবাসী ও আন্দোলনকর্মীদের অনেকে একই সুরে কথা বলছেন। আরাকান আর্মি বর্ণবাদী টুইটের মাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। ফলে ক্ষোভ ও উত্তেজনা তীব্র হচ্ছে। আরাকানে সব পক্ষের মধ্যে সমানুভূতি ও বোঝাপড়ার ঘাটতি রয়েছে।
সামরিক জান্তার অবস্থান হলো, ‘আমরা যদি এটা না পাই, তাহলে সেটা ঝাড়েবংশে ধ্বংস করে দেব।’ তারা বুথিডাং ও সিত্তেতে রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বাধ্য করেছে। এ ঘটনা অনেক রাখাইনকে, এমনকি আরাকান আর্মির নেতৃত্বকে ক্ষুব্ধ করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করেছে যে জান্তারা রোহিঙ্গাদের প্রতিবাদে নামতে বাধ্য করেছে।
এরপর জান্তা কিছু রোহিঙ্গাকে সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োগ দেয়। অথচ সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় না। আর ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করার চেষ্টা করেছিল।