কোটা বিতর্কের সমাধান আদালত নয়, সরকারের হাতে
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা–সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়কে স্থগিত করেছেন এক মাসের জন্য। এটা একটা ভালো দিক, আশা করি এটি কোটা আন্দোলনের অসন্তোষ ও মানুষের ভোগান্তি কমাতে ভূমিকা রাখবে। তবে এটি চূড়ান্ত সমাধান নয়।
আমি মনে করি, চূড়ান্ত সমাধান প্রধানত সরকারের হাতে। অতীতে সরকার কোটা আন্দোলনকারীদের আন্দোলনের মুখে কোটাব্যবস্থাই তুলে দিয়েছিল। এটি ভালো সমাধান ছিল না, কোটা আন্দোলনকারীরাও এ রকম কিছু চায়নি, চেয়েছিল কোটাব্যবস্থার সংস্কার।
এই সংস্কার সংবিধানের আলোকে করতে হলে আমাদের নির্মোহভাবে সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ বুঝতে হবে। ২৮ অনুচ্ছেদে সার্বিকভাবে সাম্য ও বৈষম্যহীনতার কথা বলা আছে। ২৯ অনুচ্ছেদে নির্দিষ্টভাবে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য করা যাবে না বলা আছে।
দুটো অনুচ্ছেদেই বৈষম্যহীনতা মূল নীতি, তবে পৃথিবীর অন্য বহু সংবিধানের মতো এখানেও কিছু ব্যতিক্রমকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সরকার মনে করলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (যেমন কোটা) করতে পারবে বলা আছে। ২৯ এবং ২৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোটার ব্যবস্থা করা তাই বাঞ্ছনীয়, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়।
সরকার চাকরিতে কোটার ব্যবস্থা রাখতে চাইলে তা সাংবিধানিকভাবে করতে হবে। কোটার সুবিধা দিতে হবে কেবল ‘অনগ্রসর’ শ্রেণিকে এবং তা কেবল সরকারি চাকরিতে তাদের ‘উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। এর মানে হচ্ছে কোটা স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না এবং উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হলে এরপর তা আর রাখা সাংবিধানিকভাবে সংগতিপূর্ণ হবে না।
আমরা মানব যে এ দেশের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলো যুগে যুগে শোষণ–বঞ্চনার শিকার হয়েছে এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী যাঁরা আছেন, তাঁদের জন্য অবশ্যই বিশেষ অনুকূল ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে।
২০১৮ সালের আগে বিদ্যমান ব্যবস্থায় এদের সঙ্গে নারী ও জেলাভিত্তিক কোটার ব্যবস্থাও রয়েছে। এর মধ্যে জেলাভিত্তিক কোটা সংবিধানবিরোধী বিবেচিত হওয়ার মতো, কারণ ২৮ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য (কোটার কোনো জেলাকে সুবিধা দিলে তা অন্য জেলার জন্য বৈষম্যমূলক হয়) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারী কোটা সংবিধানসম্মত, তবে তা উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত।