সরকারি ব্যয় কমাতেই হবে

যুগান্তর ড. আর এম দেবনাথ প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১১:২৭

আমাদের রয়েছে তিনটি বছর : বাংলা বছর, পঞ্জিকাবর্ষ ও অর্থবছর। শেষেরটি অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই বছরটিই শুরু হয়েছে জুলাই মাসের ১ তারিখে। আজ ৭ তারিখ। দেখতে দেখতে চলে যাবে জুলাই মাস। চলে যাবে ঠিকই, কিন্তু পেছনে গেছে যে বছর, সে বছরটি আমাদের বিশেষ ভালো যায়নি। এ প্রেক্ষাপটেই জারি হয়েছে আমাদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট, যার নাম ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’। নামের মধ্যে রয়েছে অনেক অর্থ। আমরা এসবে যাব না। আমরা দেখব কিছুটা অতীতকে, বাকিটা বর্তমান বছরকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে প্রকৃত অর্থে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ছোট। এর আগের কয়েকটি বাজেটের আকার ছিল উচ্চাভিলাষী। কিন্তু এবার তা নয়। ২০২৩-২৪-এর ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকার স্থলে এবার মাত্র ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট-মানে খরচের বাজেট। বোঝাই যায়, সরকার খরচের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, সরকার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সাবধানী বাণিজ্য নীতিও গ্রহণ করেছে। উদ্দেশ্য, প্রধান শত্রু মূল্যস্ফীতি রোধ করা। বড় বেশি উৎপাত মূল্যস্ফীতির। বস্তুত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পুরোটাই গেছে এ শত্রুর উৎপাতে। একটি খবরে দেখলাম, গেল অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এটাও শেষ কথা নয়। এর ভেতরে আবার সর্বনাশা খবর হলো খাদ্য মূল্যস্ফীতির খরচ। এর পরিমাণ ১২-১৫ শতাংশ। গ্রামে আরও বেশি।


বস্তুত মূল্যস্ফীতির অত্যাচার শুরু হয়েছে, যেদিন থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন শুরু হয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। এ পর্যন্ত ২৫-৩০-৩২ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে টাকার মান। এতে আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে দুর্দশা নেমে আসে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের নিট হিসাবে দেখা যায়, আমাদের রিজার্ভ এখন মোটামুটি ১৭ বিলিয়ন ডলার, যা একবার ৪৮ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন সমান শত কোটি) ডলারে উঠেছিল। এই হ্রাস আবার বিপুলভাবে আমদানি হ্রাসের পর। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। অবশ্য রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। রপ্তানি বৃদ্ধির পরিমাণ একই সময়ে ছিল ২ শতাংশের মতো। এদিকে রেমিট্যান্সের পরিমাণও বেড়েছে ভালোই। ১০ শতাংশের উপর। বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে একই সময়ে প্রায় ১০ শতাংশ।


২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ পারফরম্যান্সের প্রেক্ষাপটেই রচিত হয়েছে নতুন বাজেট। নতুন বাজেট উচ্চাভিলাষী নয়। মোটামুটি সংযত লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই এসেছে নতুন বাজেট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় আকার বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে এটা কোনো বৃদ্ধি নয়। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে অর্জিত ৫ দশমিক ৮২ শতাংশের বিপরীতে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আবার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, খরচ হবে মোট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আর রাজস্ব আয় মাত্র ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদায় করবে সিংহভাগ অর্থাৎ ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। মুশকিল হচ্ছে, এত আদায়ের পরেও ঘাটতি বিশাল। মোট ঘাটতি ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশ-গেল অর্থবছরের তুলনায় একবিন্দু কম। বরাবরই আমাদের ঘাটতি বাজেট-সরকার নির্বিশেষে। এ নিয়ে খুব বেশি কথা এতদিন হয়নি। ভাবটা ছিল-চলছে, চলবে, চলুক। সামান্য কথা কেউ কেউ বলেছে। কিন্তু সবসময়ই বলা হয়েছে, ঘাটতি প্রশাসনিক খরচের জন্য নয়, ঘাটতি হচ্ছে উন্নয়নের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে। অর্থাৎ ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া’র জন্য নয়। ঋণ উন্নয়নের জন্য। এটাও কিন্তু শেষ বিচারে কোনো যুক্তি হয় না। আয় হবে এক নম্বরে, খরচ দুই নম্বরে-যা থাকবে তা-ই হবে সম্পদ, যা দরকার উন্নয়নের জন্য।


আমাদের দুঃখ হলো, স্বাধীনতার এত বছর পরও আমাদের বাজেটে ঘাটতি। বিভিন্ন দেশ ঋণ দেয়, বাজেট সহায়তা দেয় আমাদের উন্নয়নের জন্য। ঋণ করতে হয় দেশের ভেতর। ৩ জুলাইয়ের এক খবরে দেখা যাচ্ছে, আমাদের মোট ঋণ এখন ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ডলারে হয় ১৫ হাজার ৬৮৪ কোটি। এতেও কোনো অসুবিধা নেই। কারণ অঙ্কে দেখা যাচ্ছে, শতাংশের হিসাবে আমরা সহনশীল সীমার মধ্যে রয়েছি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের মধ্যেই আছি। কিন্তু বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আমরা কি ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছি? অভ্যন্তরীণ ঋণের ক্ষেত্রে কী অবস্থা? কী অবস্থা বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে? অভ্যন্তরীণ ঋণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সরকার অনেক বকেয়া টাকা পাওনাদারদের দিতে পারছে না। ভর্তুকির টাকা দিতে হচ্ছে ‘বন্ডে’। অর্থাৎ ‘ক্যাশ’ দেওয়া যাচ্ছে না। দিতে হচ্ছে ‘বন্ডে’, যা দীর্ঘমেয়াদি দায় এবং এর ওপর উচ্চ সুদের ভার বহন করতে হবে। আবার দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈদেশিক দেনাও আমরা পরিশোধ করতে পারছি না। যদিও এসব ‘ডিফল্টার’ পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু আশঙ্কার খবর অবশ্যই। সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন ডলার নিয়ে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কেবল ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে। এর ফল হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ‘ক্যাশ’ টাকা চলে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। তাদের এখন ‘ক্যাশ’ সংকট-তারল্য সংকট। আমদানি হ্রাস পেয়েছে, আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি রয়েছে। তারপরও এ অবস্থা। এতে কাঁচামাল আমদানি, মধ্যবর্তী পণ্য এবং যন্ত্রপাতি আমদানি সবকিছুই বিঘ্নিত হচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও