পরিবেশ বিষয়ে আমরা কি নির্বিকারই থাকব?

যুগান্তর এম এ হালিম প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১১:১৬

সভ্যতার উৎকর্ষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। শিল্পায়ন যতই ঘটছে, পরিবেশ ততই বিপদাপন্ন হচ্ছে। কারণ, শিল্পায়নের ফলে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাতাসের উষ্ণতা ও বায়ুদূষণ বাড়ায়। গত এক শতকে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (০.৮৫) বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাবে ভূমিকা রাখছে। পরিসংখ্যানে জানা যায়-যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও রাশিয়া পৃথিবীব্যাপী ৫৫ শতাংশেরও বেশি কার্বন নিঃসরণ করে। বাংলাদেশসহ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর এক্ষেত্রে ভূমিকা নগণ্য। ২০২৩ সালে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অস্বাভাবিক বা অতি তাপমাত্রার বিষয়টি আমাদের ভাবিয়েছে। তখন আশঙ্কা করা হয়েছিল, ২০২৪ সাল হবে উষ্ণতম বছর, যা ইতোমধ্যেই আমরা টের পেয়েছি। দেশে এ বছরও এপ্রিল-মে মাসে মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহ ঘটেছে আর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মরুভূমির দেশকেও ছাড়িয়ে ৫৩ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে।


বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য আমরা অর্থাৎ মানুষের কর্মকাণ্ডই দায়ী। অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ, পাহাড়-বন ধ্বংস, বৃক্ষ নিধন আর অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণেই বিশ্বের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। তবে উন্নত দেশগুলো এ বিষয়ে সচেতন এবং তাদের অনেক ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে তারা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে (অ্যাডাপটেশন) পারছে এবং বিপর্যয় প্রশমন (মিটিগেশন) করতে সক্ষম হয়েছে। মূলত কলকারখানা এবং যানবাহন থেকেই বেশি কার্বন নিঃসরণ হয়। উন্নত দেশগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসবের নেতিবাচক প্রভাব তথা পরিবেশ বিপর্যয় কমিয়ে আনতে পেরেছে। উপরন্তু, তারা শুধু বনভূমি সংরক্ষণ নয়, তাদের নগরগুলোর সবুজায়ন ঘটিয়েছে। এমনকি মরুভূমির দেশ হিসাবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ কৃত্রিমভাবে শহরে সবুজায়ন ঘটিয়েছে। দুবাই, দোহা, জেদ্দা এসব শহরে দেখেছি, নতুন রাস্তা তৈরির সময় মাটি ও পানি সংকট সত্ত্বেও বিশেষ ব্যবস্থায় একইসঙ্গে রাস্তার পাশে গাছ ও ঘাস লাগানো হচ্ছে, যাতে উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রতিরোধ বা প্রশমন করা যায়। তারপরও প্রতিকূলতা থামানো যাচ্ছে না। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশে দেশে দাবানলের কারণে প্রায়ই অনেক বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। ২০২২ সালে পৃথিবীর ফুসফুস হিসাবে খ্যাত আমাজানের একটা বিশাল অংশ পুড়ে গেছে। এখনো মাঝেমধ্যে অনেক দেশে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়। দেশের সুন্দরবনে ৪ মে সংঘটিত আগুনে বনভূমির কিছু হলেও ক্ষতি হয়েছে, যাকে সতর্কবার্তা হিসাবে ভাবতে হবে।


পরিবেশ বিপর্যয় রোধে বাংলাদেশ যেন একেবারেই নির্বিকার। এখানে উদ্যোক্তারা শিল্পায়নের জন্য নতুন নতুন কলকারখানা তৈরি করেন; কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় আগ্রহী নন। ভাবখানা এমন যে, তারা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছেন; সুতরাং, পরিবেশের একটু-আধটু ক্ষতি মেনেই নিতে হবে। অথচ একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু করার জন্য অনেক শর্তের মধ্যে পরিবেশের ক্ষতি না করার অঙ্গীকারের অংশ হিসাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের সার্টিফিকেট নিতে হয়। অনেক শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত পানি পরিশোধন না করেই প্রাকৃতিক জলাশয়ে (নদী-খাল-বিল-পুকুর) সরাসরি ফেলা হচ্ছে। অথচ প্রতি কারখানাতেই নিজস্ব ইটিপি থাকার কথা। আমাদের মনে আছে, বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে হাজারীবাগের টেনারিশিল্প সরিয়ে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে, যদিও এর আগেই বুড়িগঙ্গার দূষণ সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছেছিল। গেল কয়েক বছরে হেমায়েতপুর থেকে সিঙ্গাইর হয়ে অনেকবার মানিকগঞ্জ যাওয়ার পথে টেনারির কারণে সাভারের আশপাশের নদী আর খালের পানি তথা পরিবেশ দূষণের চিত্র দেখে আহত হয়েছি। কারণ, মানিকগঞ্জ যাওয়ার জন্য এ পথটি বেছে নিতাম নদী আর রাস্তার দুপাশের গাছের নির্মল বাতাস উপভোগ করার লোভে। এ চিত্র শুধু ঢাকা, গাজীপুর বা সাভারের নয়; শহর, গ্রাম-যেখানেই শিল্পায়ন হচ্ছে, সবখানেরই। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা থেকে জানা যায়, রাজধানী ও আশপাশের শিল্প এলাকা থেকে সংগৃহীত ভূপৃষ্ঠ ও কলের পানির নমুনায় ‘পিফাস’ নামের উচ্চমাত্রার বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা পানি দূষণের বড় উৎস। কারণ, এটি প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থায়ীভাবে জমা থাকে, যা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, ভ্রূণের বৃদ্ধি ও থাইরয়েড হরমোন ফাংশনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া মানুষের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।


সম্প্রতি নগর গবেষণা কেন্দ্র আয়োজিত এক সেমিনারে উল্লেখ করা হয়, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে দেশের ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ ৫ কোটিরও বেশি মানুষ শহরে বাস করছে। অথচ এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাগরিক সুবিধা, বিশেষত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠছে না, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এ অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে গত ৭ বছরে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে সাড়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


দেশে পরিবেশ দূষণের আরও কারণ হচ্ছে, প্রাকৃতিক জলাশয়-জলাধার (পুকুর, খাল) ভরাট, নদ-নদী ভরাট অথবা সংকুচিত হওয়া, পাহাড়-বন ধ্বংস, বৃক্ষ নিধন, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলার সময় ধুলাবালি তথা বায়ুদূষণ, অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ইত্যাদি। আছে ফসল উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার। আর যত্রতত্র ইটভাটা তো পরিবেশ দূষণকে এক ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এর আগ্রাসন থেকে পার্বত্য জেলাগুলোর দুর্গম এলাকাও মুক্ত নয়, যা সম্প্রতি গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানা যায়। আমি নিজেও বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য জেলাগুলোর থানচি, দিঘিনালাসহ অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণকালে এমনটা দেখেছি। অথচ ইটভাটা করতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ সঠিক নজরদারির অভাবেই এভাবে যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে উঠছে, যা পরিবেশ দূষণে আগ্রাসী ভূমিকা রাখছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও