নানা সংকটে বাপ-দাদার পেশা ছাড়ছেন সোনার কারিগররা
জীর্ণশীর্ণ পুরনো ছোট্ট খুপরি ঘর। তার ভেতরে এক কোণে কুপিবাতি জ্বালিয়ে শ্বাস ধরে বাঁকনলে ফুঁ দিচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব দেব দুলাল কর্মকার। এরপর সোহাগা দিয়ে সোনা-রুপা গলিয়ে সামনে রাখা ছাঁচে ঢেলে দিচ্ছেন। ঠান্ডা হলে হাতুড়ি দিয়ে টুংটাং শব্দে পিটিয়ে দিচ্ছেন অবয়ব। প্রয়োজনবোধে গলানো সোনা-রুপা থেকেই চিকন সনের ধারালো মুখ ব্যবহার করে তুলছেন নকশা। এভাবেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি বানিয়ে ফেলছেন নারীর সৌন্দর্য আর আভিজাত্যের অহংকার চকচকে নিখুঁত সোনা-রুপার গহনা।
এ কাজে দেব দুলাল যুক্ত আছেন ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। দীর্ঘ এ সময়ে গভীর ধ্যান, মনোসংযোগ আর অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে নিজের অন্ধকার খুপরি ঘর থেকেই বের করছেন সোনা আর রুপার অসংখ্য গহনা। বাবা ও বড় ভাইয়ের পর তিনিই আগলে রেখেছেন বংশপরম্পরার এ পেশা। তার পর হাল ধরার আর কেউ নেই। অভিমানের সুরে তিনি বললেন, ‘কী হবে এ কাজ করে? পেট-ই চলে না। কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আগের মতো গহনা গড়ার কাজও নেই। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম দিন কাটাতে হয়। এর চেয়ে ছেলেপুলে গার্মেন্টসে কাজ করলেই বেশি ইনকাম। অন্তত স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন চালাতে পারবে।’
রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার নিভৃত পল্লী বরমী গ্রাম। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত এ গ্রামের বাজারের বয়স প্রায় শতবর্ষ। মধ্যবাজারের কামারপট্টি সড়কের উভয় পাশে একসারিতে রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক জুয়েলারি দোকান। যেখানে কর্মরত আছেন প্রায় শতাধিক স্বর্ণকার (সোনা/রুপার গহনা তৈরির কারিগর)। তবে, তাদের অধিকাংশের মনেই ভর করেছে হতাশা।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- স্বর্ণকার
- পেশা পরিবর্তন