কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জনগণের করের টাকা কোথায় যায়?

যুগান্তর মুঈদ রহমান প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৪, ১০:৩৫

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে টাকার খবর। এক-দুই টাকা না, হাজার হাজার কোটি টাকার খবর। সেই টাকা আবার বৈধ নয়, বেপথে আয় করা টাকা। যারা করেছেন, তারা আবার মামুলি ইনসান নন, সরকারের অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবিশেষ। তাদের ক্ষমতা অকল্পনীয়। আমার মতো সাধারণ মানুষের ব্যাংক হিসাবে দশ লাখ টাকা জমা হলে তা ‘সন্দেহজনক লেনদেনের’ পর্যায়ে পড়ে; কিন্তু ওই ক্ষমতাবানদের অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হলেও তা ‘সন্দেহজনক’ হয় না। বুঝতে অসুবিধা হয় না, অবৈধভাবে উপার্জিত হাজার কোটি টাকাকে নিরাপদ রাখতে নিশ্চয়ই আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচা করা হয়েছে। তাদের যেসব টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে, সাধারণ মানুষের তা দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু শত শত একর জমি করায়ত্ত করার বিষয়টি কি মানুষের দৃষ্টির আড়ালে থাকতে পারে? সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার চোখে কি পড়েনি? পড়েছে, তবে ক্ষমতার ধারের কাছে সে দৃষ্টি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়েছে। দেশের এই যে উন্নয়নের জোয়ারের কথা বলা হচ্ছে, তার ছিটেফোঁটাও তো সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে পড়ছে না। উন্নয়ন সুবিধার পুরোটাই ভোগ করছে গুটিকয় মানুষ। সপ্তাহজুড়ে হাজার কোটি টাকার যে গল্প সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তার সংখ্যা চার-পাঁচটার বেশি নয়। এমন হাজার হাজার সত্য গল্প আছে, যা এখনো অপ্রকাশিত। শুধু শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে হাজার কোটি টাকার গল্প প্রকাশিত হবে কী হবে না। তবে এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। শাসনব্যবস্থার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে একজন যা খুশি তা-ই করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোটি কোটি অক্ষম মানুষের চোখ দিয়ে দেখা ছাড়া করার কিছু নেই।


আমাদের মতো সাধারণ মানুষ এ মুহূর্তে রাজনৈতিকভাবে অভিভাবকহীন। এর একমাত্র কারণ হলো, কোনো দলের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সাধারণ মানুষের কোনো ভূমিকা বা প্রয়োজন নেই। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এখন কী করে যেন জনগণের মতের তোয়াক্কা না করেই ক্ষমতায় থাকা যায়। শাসকগোষ্ঠী তাই এখন আর আমাদের ভালো-মন্দের কথা ভাবে না। যাদের সহযোগিতায় ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা যায়, তাদের স্বার্থটাই বেশি করে বিবেচিত হয় এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শাসনক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই, আক্ষেপটা হলো জনগণের টাকার হিসাব নিয়ে। যে টাকা করের মাধ্যমে এবং জনগণকে বন্ধক রেখে ঋণের মাধ্যমে আহরণ করা হয়, সেই টাকা ব্যয় করার একটা গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নির্ভেজাল হিসাব আমরা চাই। আপনি যেভাবেই ক্ষমতায় আসুন না কেন, থাকুন না কেন, জনগণের এ চাওয়াটা অধিকারের মধ্যে পড়ে।


সামন্তব্যবস্থায় জনগণের কাছ থেকে আহরিত অর্থ জমা হতো রাজকোষে। এ রাজকোষের সমুদয় অর্থ ব্যয় করার একক ক্ষমতা ছিল রাজার। কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করবেন, কোন বিনোদনে কত অর্থ ব্যয় করবেন, তার সম্পূর্ণ এখতিয়ার ছিল রাজার। প্রজাগণের কাছে সেই অর্থের কোনো হিসাব দেওয়ার দায় রাজার ছিল না। কিন্তু আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায়ও করের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়, জমা করা হয় সরকারি কোষাগারে। তবে এ অর্থের কোনো একক মালিকানা রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধানের নেই। সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়, জনগণের টাকা কোন খাতে কত ব্যয় করা হয়েছে। যে কারণে প্রতিবছরই জাতীয় বাজেটে সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকে, আগামী এক বছরে সরকার কোন কোন উৎস থেকে কত আয় করতে চায় এবং কোন কোন খাতে তা ব্যয় করতে চায়। আয়-ব্যয়ের এ সাধারণ সমীকরণটি স্বাভাবিকভাবে ঘটে থাকলে কথা উঠত না, কিন্তু বাস্তবতা হলো এ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতার সঙ্গে সবসময় সম্পন্ন করা হয় না। কোথায়, কীভাবে, জনগণের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়, তার কিছুটা আলোচনা করছি।


ধরা যাক, সরকারি কোষাগারে জমা আছে ১০০ টাকা। এ টাকা সরকারপ্রধান চাইলেই যেনতেনভাবে খরচ করতে পারবেন না। ব্যয় করার যুক্তি ও ন্যায়সংগত খাত থাকতে হবে। ধরা যাক, জনকল্যাণে কোনো একটি এলাকায় রাস্তা নির্মাণ করা প্রয়োজন। সরকারের এ খাতে ব্যয় যুক্তিসংগত। সরকার রাস্তা নির্মাণে ১০০ টাকা বরাদ্দ দিল; এতে কোনো অন্যায্যতা নেই। কিন্তু সমস্যাটা হলো, রাজনৈতিক চাপ, অনিয়ম ও লুটপাটের ফলে মাত্র ৪০ টাকা ব্যয় করে রাস্তাটি কোনোরকমে সমাপ্ত করা হয় অথবা ৪০ টাকার রাস্তাটির নির্মাণব্যয় ১০০ টাকা দেখানো হয়। বাদবাকি ৬০ টাকা চলে যায় রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ঠিকাদার, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের পকেটে। ১০০ টাকা ব্যয় করে জনগণ ৪০ টাকার রাস্তা পেলেন। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা অনেকেই আজকাল উন্নয়ন-উন্নয়ন চিৎকার শুনি, কিন্তু একথা মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্নীতি করতে হলে বড় বড় প্রকল্প অপরিহার্য। একটি সরকার যদি জনকল্যাণকামী হয়, তাহলে সে তো উন্নয়ন প্রকল্প নেবেই, যদি লুটেরা সরকারও হয়, তাহলেও তাকে উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে। কেননা, প্রকল্প ব্যতীত লুটপাট অসম্ভব। সুতরাং, আমাদের দেখতে হবে উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের অর্থ কী পরিমাণ লুটপাট হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও