রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ : প্রত্যাবাসনই সমাধান

মিয়ামারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও রাখাইনে আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলমান থাকায় সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত। এ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি আরও জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের বোঝা টেনে চলেছে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ক্রমেই সহায়তা কমে আসছে এবং এদের কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তায় হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে।


রোহিঙ্গারা দলগত সশস্ত্র অপতৎপরতা, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার, মাদক, মানব পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও দোকান দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০২৩ সালে ৬৪ জন ও ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ৩৩ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশ মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র চোরাকারবারেও জড়িত। এ মাদক চোরাকারবারের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। ফলে মাদকাসক্তি তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও বাধার সৃষ্টি করছে।


রোহিঙ্গারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পে নানা ধরনের অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী ও শিশুরা ব্যাপক অনিরাপত্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। সেখানে নারী ও শিশু পাচারকারীরা সক্রিয়। ক্যাম্পের জনঘনত্বের কারণে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যদের পক্ষে সবসময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। একদিকে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে কর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্যাম্পগুলো পরিণত হয়েছে মানব পাচার, মাদক চোরাচালান, জঙ্গি নিয়োগসহ নানা অপরাধের স্বর্গরাজ্যে। এতে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।


কক্সবাজারের ৩২টি ক্যাম্পেই অপরাধমূলক কাজকর্ম চলছে। গত ১৫ মে নিরাপত্তা বাহিনী মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। আরসা আধিপত্য বিস্তার, কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গত ১৯ মে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান চালিয়ে শীর্ষ চার সদস্যকে গ্রেফতার ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে।


মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এএ’র সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চলমান সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা, আল ইয়াকিন, আরএসওসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। ক্যাম্পে অবস্থানকারী এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য সেখানে অস্থিরতা তৈরি করতে এবং নাশকতার উদ্দেশে ক্যাম্পে একের পর এক আগুন লাগাচ্ছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা মনে করে। গত ২৫ মে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিন শতাধিক বসতি আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়, একইসঙ্গে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই শতাধিক বসতি আর অর্ধশত দোকানপাট।


কক্সবাজারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গত ১২ মে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তারা ক্যাম্পের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপের পাশাপাশি সেখানকার নানা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা তাদের কাছে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহের কথা জানায়। পর্যবেক্ষক দলটি ক্যাম্প ইনচার্জদের সঙ্গে আলোচনা করেন ও সংকট নিরসনের উপায়গুলো জানার চেষ্টা করেন এবং এ সংকট নিরসনে সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন বলে জানান। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক সন্ত্রাসী দল ও তাদের নেতারা প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের চোরাকারবারের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করছে। তাদের অনেকে এ সুবিধাজনক পরিস্থিতি ছেড়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে অনিচ্ছুক। এরা বিভিন্ন সময় প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত। এদের তাই চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও