মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের অস্বস্তি বাড়বে
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট কেমন হলো, তা এককথায় বলার মতো অর্থনৈতিক জ্ঞানবুদ্ধি আমার না থাকলেও পেশাগত কারণে কিছু না কিছু লিখতেই হয়। সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানে হলো জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি। বাজেটে কর বসানো ও কর অব্যাহতি দেওয়া একটি রুটিন বিষয়।
প্রতিবছরই বাজেট পেশের পরদিন সংবাদপত্রে শিরোনাম হয় কোন কোন পণ্যের দাম কমবে আর কোন কোন পণ্যের দাম বাড়বে। যেসব পণ্যের দাম বাড়ার কথা, সেগুলোর দাম ঠিকই বাড়ে, হয়তো যতটুকু বাড়ার কথা তার চেয়ে বেশিই বাড়ে। কিন্তু যেগুলোর দাম কমার কথা, সেগুলোর দাম আর কমে না। আমাদের ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে যতটা মুখিয়ে থাকেন, কমাতে ততটা নয়।
দেশে এখন আর কৃচ্ছ্রসাধনের রাজনীতি নেই, আছে সিন্ডিকেটের অক্টোপাস। এ অবস্থায় শহুরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত রয়েছে সবচেয়ে সংকটে-শঙ্কায়। সমাজের এই অংশই মতামত প্রচারের প্রধান বাহন। এই সরকারের আমলে বিগত বছরগুলোতে মানুষ কতটা ভালো ছিল, কোভিড-দুর্যোগের সময় সরকার সংগত ও ভালো কাজ কতটুকু কী করেছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে কীভাবে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল; তা দিয়ে কিন্তু গণমানুষের মতামত ও প্রতিক্রিয়া আবর্তিত হবে না। সংকট ও শঙ্কা মানুষকে সমালোচনামুখর করে তুলছে।
এরই মধ্যে এসেছে বাজেট। তাই বাজেটের গণবান্ধব বা ভালো দিকগুলো যে আলোচনায় আসবে না এবং এলেও যে তা সংকট ও শঙ্কাগ্রস্ত মানুষ তেমনভাবে আমলে নেবে না, এমনটা বলাই বাহুল্য। দেশ রয়েছে রাজনৈতিকভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে। সরকারবিরোধী অংশ বাজেট প্রত্যাখ্যান করে সমালোচনা করবে, এটাই নিয়ম হয়ে আসছে।
বর্তমান সরকারবিরোধী প্রধান বিরোধী দল বিএনপি স্বাভাবিকভাবেই বাজেটের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। কিন্তু তারা আয়নায় নিজেদের মুখ দেখছে না। বিশ্বব্যাপী সত্তরের মতো ‘ভয়াবহ মন্দা’ যখন ছিল না, তখন ক্ষমতায় থেকে তাঁরা কী বাজেট দিয়েছিল, তা তারা স্মরণে রাখছে না। তাদের আমলে কানসাটের গুলি কিংবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা এবং দেশ যে তখন ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’, ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ প্রভৃতি তালিকায় উঠেছিল, তা দলটি ভুলে যেতে চাইছে।
সমাজে রয়েছে প্রভাবশালী সুশীল সমাজ, যা রাষ্ট্র ও সমাজের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যাঁদের একটা অংশ সোচ্চার থাকেন কখনো সমদূরত্বের নীতি নিয়ে, কখনো সরকারের ভালো কাজ তেমন বিবেচনার মধ্যে না নিয়ে সীমাবদ্ধতা-দুর্বলতা নিয়ে আলোচনামুখর হন এবং সেটাকেই একমাত্র কাজ বলে মনে করেন, এমনকি তাঁরা কিং মেকার বা কিং হতেও চান। এটা তাঁদের সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতার দিক। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁরাও কিন্তু সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে দুই বছর দেশ চালিয়েছিলেন। তদুপরি তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। নিজেরা তখন কী করেছিলেন, তা তাঁদের আয়নায় দেখা উচিত। বাস্তবে সমাজের উচ্চস্তরে দুঃসময়ে ত্যাগ বা ধৈর্য নয়, ভোগেরই রাজত্ব চলছে রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে।
সংবাদপত্রে ইতিমধ্যে বাজেটের ভালো ও খারাপ যে দিকগুলো বিভিন্নজন তুলে ধরেছেন, সংক্ষেপে সেগুলো এ রকম: সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। স্বাস্থ্য খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্তটিও ইতিবাচক।