টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ
এবারের জাতীয় বাজেটের শিরোনামে কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ শব্দবন্ধ যুক্ত করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যাভিমুখী স্মার্ট বাংলাদেশ। যদিও এই শব্দবন্ধগুলো আমাদের দেশের রাজনীতি ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুচর্চিত। তা সত্ত্বেও জাতীয় বাজেটের শিরোনামে এগুলো যুক্ত করার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।
আমরা জানি যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি) জাতিসংঘের একটি কর্মসূচি। এর মূল স্তম্ভ চারটি—সমাজ, পরিবেশ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। এই কর্মসূচির মূল কথা হলো, এ চারটি ক্ষেত্রে (প্রকৃতপক্ষে সব ক্ষেত্রে) উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করা। কিন্তু সেই কর্মকাণ্ড যেন কোনোভাবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে; অর্থাৎ একই সঙ্গে বর্তমানকে এগিয়ে নেওয়া এবং ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করা। এ চারটি স্তম্ভ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৭টি লক্ষ্য অর্জন স্থির করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে।
বাংলাদেশ এ-সংক্রান্ত জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী। সেই হিসেবে সব উন্নয়ন পরিকল্পনায় এই কর্মসূচি অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, আমরা তা অনুসরণ করেও আসছি। তাহলে এবার জাতীয় বাজেটের শিরোনামে এই শব্দবন্ধ যুক্ত করার প্রয়োজন হলো কেন? তাহলে কি বিষয়টি এ রকম যে, উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা যতই বলি না কেন, প্রকৃতপক্ষে আমাদের উন্নয়ন সেই লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগোতে পারছে না? বরং সেই উন্নয়নের প্রকৃতি অত্যন্ত ভঙ্গুর এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তো সুরক্ষা দেবেই না, এমনকি বর্তমান প্রজন্মের জীবনমান উন্নয়নেও ব্যর্থ? এ বিষয়টি যথেষ্ট আলোচনা-পর্যালোচনার দাবি রাখে।
গত দেড় দশকে বাংলাদেশ যে সামগ্রিকভাবে এগিয়েছে, উন্নতি করেছে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে সেই স্বীকৃতির মধ্যেও কোনো সমালোচনা যে নেই তেমন নয়। আর সেই সমালোচনা অযৌক্তিকও নয়। যেমন এসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো স্বাস্থ্য। সব বয়সী প্রত্যেক মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করা (এসডিজি নম্বর-৩)।
কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠার পর গত দেড় দশকে আমাদের দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কী উন্নতি আমরা দেখতে পাই? স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত অবকাঠামো বেশ কিছুই তৈরি হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা, চিকিৎসা, ওষুধের মান ও দাম প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমরা কি একটু অগ্রসর হতে পেরেছি? একটু ভালো চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য দেশের লাখ লাখ সাধারণ মানুষের ভিন দেশে যাওয়া কি একটুও আমরা কমাতে পেরেছি? দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর কোনো মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা তৈরি হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব সবারই জানা।
এসডিজি-৪ হলো শিক্ষা-সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা। সেখানে বলা হয়েছে, সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং জীবনভর শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু আমরা জানি, গত দেড়-দুই দশকে সবচেয়ে বেশি বেহাল অবস্থা হয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার। এটা সমতাভিত্তিকও নয়, মানসম্পন্নও নয়; বরং শিক্ষার মান ক্রমাগতভাবে অবনমিত হয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- টেকসই উন্নয়ন
- স্মার্ট বাংলাদেশ