৬ দফা : অর্থনৈতিক মুক্তি কি মিলেছে?
প্রতিবছর যে সময় সরকারের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের দলিল জাতীয় বাজেট সংসদে উপস্থাপিত হয়, সাধারণ তা ৭ জুনের কাছাকাছি সময়ই হয়। এবারও জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করা হয়েছে ৬ জুন। বাজেটের সাথে কি ঐতিহাসিক ছয় দফার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে? এত বছর পর ছয় দফা দিবস পালনের তাৎপর্য কী?
ছয় দফার তিন দফাতেই রয়েছে অর্থনীতির বিষয়। পাকিস্তানের বড় প্রদেশ হয়েও কীভাবে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী দেশের একটি অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত করেছে তা উল্লেখ করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন।
এখন যদি আমরা ছয় দফা পড়ে দেখি তাতে প্রথম দফায় শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে ফেডারেটিভ রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে। ছয় দফার দ্বিতীয়টিতে ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা। বলা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকবে দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতিতে। অবশিষ্ট সব বিষয় অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর হাতে।
সর্বশেষ ছয় নম্বর দফায় বলা হয়েছিল আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য সংবিধানে অঙ্গরাষ্ট্রগুলো আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে। এর বাইরে তিনটিই ছিল অর্থ-বাণিজ্যের বিষয়।
পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী এখনকার বাংলাদেশ, তখনকার পূর্ব-পাকিস্তানের রপ্তানি পণ্য পাট ও চা থেকে আয় করা বৈদেশিক মুদ্রায় সরকারের খরচ আর নতুন শহর বানিয়েছিল কিন্তু জনসংখ্যায় বেশি হলেও বাঙালিদের জন্য বরাদ্দ হতো খুবই কম।
তাই ছয় দফার ৪নং দফাটি ছিল রাজস্ব কর বা শুল্ক সম্পর্কিত। বলা হয়েছিল, ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনোরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গরাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।
তৃতীয় দফায় দুটি বিকল্প প্রস্তাব ছিল। এর একটি হচ্ছে—দেশে দুটি পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অপরটি হচ্ছে একই মুদ্রা চালু থাকলেও এমন ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার বন্ধ হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভের কথাও বলা হয়েছে।
পঞ্চম দফাটি ছিল বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে। এতে ছিল যে ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের আলাদা হিসাব থাকবে। এর মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারাধীন থাকবে। ঐ যে বলেছিলাম বাংলার পাট আর চা রপ্তানির আয় থেকে কোনো হিস্যা পেত না বাঙালিরা, সেইটাই এই দাবির মূল কথা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- অর্থনৈতিক মুক্তি
- ছয় দফা