ভারতের নির্বাচনী ফল বাংলাদেশকে কী বার্তা দিচ্ছে?
ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট। এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯৩ আসন; ইন্ডিয়া জোটের আসন ২৩২টি।
এখন প্রধানমন্ত্রী হতে হলে নরেন্দ্র মোদিকে জোট সরকার গড়তে হবে। অর্থাৎ ছোট শরিকদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। সরকার চালাতে গিয়ে আগের মতো একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না; বরং তাঁকে অন্যদের মুখাপেক্ষী হতে হবে। বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর দল টিডিপি ও বিহারের নীতিশ কুমারের দল জেডিইউ সম্ভাব্য এনডিএ সরকারে প্রভাবশালী হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে, গত দুই মেয়াদে নরেন্দ্র মোদি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি সরকার চালিয়েছেন। অটল বিহারি বাজপেয়ীর মতো জোট সরকার চালানোর অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। সেদিক থেকে দেখতে হবে তিনি কীভাবে নতুন সরকার পরিচালনা করেন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের শরিক দলগুলোর কে সরকারে কোন পদ পান, সেটাও দেখা দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজেপি জোটের শরিক দলগুলো বড় আকারেই দরকষাকষি করতে চাইবে। বিশেষ করে মোদি সরকারের অস্তিত্বের জন্যই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুর সমর্থন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই বাস্তবতা সবচেয়ে বেশি বুঝবেন নাইডু ও নীতীশ।
নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি গত দুটি নির্বাচনে কাজে দিলেও এবার এ অস্ত্র সেই অর্থে কাজে দেয়নি। বরং নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছে– তারা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সঙ্গে নেই।
এমনকি যে অযোধ্যাকে বিজেপি রামের জন্মভূমি দাবি করে থাকে, সেখানেও মোদি-ঝড় কাজে দেয়নি। হিন্দু ভোটারদের তুষ্ট করে টানা তৃতীয় মেয়াদ নিশ্চিত করতে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন করেছিলেন। বিজেপি সমর্থকরা দাবি করেছিল, এ মন্দির লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আদতে দেখা গেল, বিজেপি সেখানে হেরেছে সমাজবাদী পার্টির কাছে।
হিন্দুত্ববাদ পছন্দ না করার বাইরেও বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার কারণ হিসেবে বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করেছে। ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা তার অন্যতম। উচ্চ বেকারত্বের কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যে হয়নি– এমন নয়। কিন্তু সেখানে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য প্রকট। মোদির আশপাশে সব সময়ই বেশ কিছু বড় ব্যবসায়ী থাকেন এবং তারা বেশ পয়সাও বানিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় জনগণের সে অর্থে অর্থনৈতিক সংকট কাটেনি এবং বৈষম্যও তারা পছন্দ করেনি।
মোদির সময়ে ভারতের প্রবৃদ্ধি হলেও তাতে যে সাধারণ মানুষের খুব একটা লাভ হয়নি– রামমন্দিরের আসনে মোদির ভরাডুবি তার প্রমাণ। অযোধ্যা এই ঘটনা প্রমাণ করে, ধর্মের ধুয়া তুলে দুই একবার নির্বাচনে জেতা যায়; কিন্তু সেই ক্ষমতা টেকসই হয় না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- লোকসভা নির্বাচন